স্টাফ রিপোর্টার , নোয়াখালী :
একই স্থানে যুবলীগের দুই গ্রুপের তারুণ্যের সমাবেশ আহবানকে কেন্দ্র করে নোয়াখালীর কবিরহাট পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। ১৪৪ ধারা জারির চরম উত্তেজনার মধ্যে পৌর এলাকার বাহিরে গিয়ে তারুণ্যের সমাবেশ ও র্যালি করেছে উপজেলা যুবলীগ।
কবিরহাট পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক রায়হানের অনুসারী পৌরসভা যুবলীগের সভাপতি আবুল বাশার বাবুল এবং কবিরহাট উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবু জাফর আবির অনুসারীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে ।
২রা নভেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারার আদেশ জারি করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফাতিমা সুলতানা। দুপুর ২টা থেকে কবিরহাট বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
১৪৪ ধারা জারি করায় পৌরসভা এলাকায় সমাবেশ করতে না পেরে পৌরসভার বাহিরে তেঁতুলতলা এলাকায় তারুণ্যের সমাবেশ ও র্যালি করে কবিরহাট উপজেলা যুবলীগ। এতে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবু জাফর আবির ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেয়।
জানা গেছে, কবিরহাট উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি গঠন নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক রায়হানের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয় উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবু জাফর আবির ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের। এ বিরোধের জের ধরে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে গত ২০ অক্টোবর সন্ধ্যার দিকে উপজেলার নরোত্তমপুর, ঘোষবাগ ও ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন শাখার নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটি প্রত্যাখ্যান করে ঝাড়ু মিছিল ও সমাবেশ করেছেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মিরা। অভিযোগ রয়েছে এ ঝাড়ু মিছিলের নেপথ্যে ছিল মেয়র জহিরুল ইসলাম রায়হানের হাত। এ নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক রায়হানের সঙ্গে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি-সম্পাদকের দূরত্ব প্রকাশ্যে বাড়তে থাকে।
যুবলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার ২ রা নভেম্বর বিকেলে উপজেলার কবিরহাট বাজারের বঙ্গবন্ধু চত্ত্বরে একই সময়ে মেয়র রায়হান অনুসারী কবিরহাট পৌরসভা যুবলীগের সভাপতি আবুল বাশার বাবুল এবং উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবির অনুসারীরা তারুণ্যের জয়যাত্রার সমাবেশের আহ্বান করে। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা দেখা দিলে উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে।
কবিরহাট উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবু জাফর আবির অভিযোগ করে বলেন, গত সাত দিন আগে থেকে যুবলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে তারুণ্যের জয়াত্রা সমাবেশ আহ্বান করে উপজেলা যুবলীগ। গতকাল বুধবার মেয়র রায়হানের ইন্ধনে আকস্মিক একই স্থানে সমাবেশ ডাক দেয় তার অনুসারী কবিরহাট পৌরসভা যুবলীগ সভাপতি বাশার। আইনশৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা তেঁতুলতলা এলাকায় সমাবেশ করেছি। আমাদের সমাবেশে কবিরহাটের সর্বস্তরের যুবলীগের নেতাকর্মী ও যুব সমাজ অংশ নিয়েছে। মেয়রের লোকজন আমাদের কর্মীদের সমাবেশে আসছে পথে পথে বাঁধা দিয়েছে। আমাদের দুইজন যুবলীগ নেতা আহত হয়। তার পরও আমাদের অনেক বড় সমাবেশ হয়েছে। তাদের সাথে যুবলীগের গুটি কয়েক লোক ছাড়া কেউ নেই।
কবিরহাট পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক রায়হান গণ মাধ্যমকে বলেন, আমার কোনো গ্রুপ নেই। আমার সাথে কারো বিরোধ নেই। দলের সবাই আমার জন্য সমান। আমি দুই গ্রুপকে নিয়ে বসেছি। বিষয়টি সমাধান করা যায় কিনা দেখছি।
কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন অবনতি না ঘটে এজন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। কবিরহাট পৌরসভা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কবিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফাতিমা সুলতানা বলেন, দুই পক্ষ কবিরহাট পৌরসভায় একই স্থানে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকায় সমগ্র কবিরহাট পৌরসভা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এ সময় সব ধরনের সভা সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
