নিরাপদ বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চিতকরণে মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি
জাবি প্রতিনিধি :
বহিরাগত এক দম্পত্তিকে ক্যাম্পাসে ডেকে এনে গভীর রাতে সংঘটিত ধর্ষণের ঘটনার প্রেক্ষিতে নিয়ে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত সমূহের দ্রুত বাস্তবায়ন এবং বহিরাগত ও অছাত্র মুক্ত নিরাপদ বিশ্ব বিদ্যালয় নিশ্চিতকরণে মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ বুধবার বেলা বারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে প্রায় শতাধিক শিক্ষকের উপস্থিতিতে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহেদ রানার সঞ্চালনায় বিভিন্ন বিভাগের একাধিক শিক্ষক বক্তব্য রাখেন।
ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুলতানা আক্তার বলেন, যদি এই ধর্ষণের বিচার না হয় তাহলে আমরা শিক্ষকরা গণপদত্যাগ করব। তিনি আরও বলেন, আজকে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে আমি অত্যন্ত লজ্জিত এবং ক্ষুব্দ। আমি জোর গলায় বলতে চাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষকের কোনো স্থায়ী নাই। আমি পূর্বেও বলেছি, এখনো বলছি বিশ্ব বিদ্যালয় গেস্ট রুম কালচার, গণরুম বন্ধ না হলে এই অন্যায় কোনভাবে রোধ করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় অবৈধ শিক্ষার্থীরা হলে সিট দখল করে আছে আর আমার সাধারণ শিক্ষার্থীরা বছরের পর বছর ধরে গণরুমে কষ্ট করছে।
মানববন্ধনে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. হাসিবুর রহমান বলেন, এই ক্যাম্পাস আমাদের বাসস্থান। যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে তার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আজকে এখানে যে জনমত তৈরি হয়েছে সেটি যদি একটি ঘটনার বিচারের দাবির মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যায় তাহলে এই সমাবেত হওয়ার আসল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে৷ ধর্ষক কিন্তু একদিনে তৈরি হয় না, একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একজন ধর্ষক তৈরি হয়। একজন শিক্ষার্থীর ধর্ষক বা নিপীড়ক তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয় গনরুমে প্রবেশের মধ্য দিয়ে৷ গনরুমের পরিবেশ তার পড়াশোনাকে ধ্বংস করে দেয়, ফলে সে চরম হতাশার মধ্য দিয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে৷ যার চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে ধর্ষন, খুন, ছিনতাই এর মাধ্যমে। তাই নিপীড়ক তৈরি প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। এর জন্য প্রভোস্টদের মেধার ভিত্তিতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর আসন নিশ্চিত করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে ৷
ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, এই ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা আর যেনো এটা না ঘটে সেজন্য শিক্ষক সমিতিকে নেতৃত্ব দিতে হবে৷ এজন্য ধর্ষকের বিচারের পাশাপাশি ধর্ষণে সহায়তাকারী সকলকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। যদি প্রভোস্ট এবং প্রক্টর ও এর সাথে জড়িত থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য যেনো না হয় আমরা একটি মানববন্ধন করেছি আমাদের কাজ শেষ, বরং এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িত সকলের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের জাগ্রত থাকতে হবে।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি আজ বিশ্ব পরিমণ্ডলে পদদলিত করেছে কিছু কুলাঙ্গার। আমরা এর থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। আজকে যে পৈশাচিক ঘটনা ঘটেছে এটাকে বিছিন্ন ঘটনা বলে মনে করি না। আমি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসন কে সাধুবাদ জানাই অভিযুক্তদেরকে রিমান্ডে নিয়েছে কিন্তু এখানেই যেনো শেষ হয়ে না যায়। এর আগেও দেখেছি গ্রেপ্তার হলেও শেষ পর্যন্ত তারা বেরিয়ে আসে । সরকারের কাছে আমি দাবি জানাই এদের যেনো প্রকৃত বিচার হয় । আমরা আজ ধর্ষণের বিরোধীতা বা শাস্তি দাবি করছি কিন্তু আমরা তিলে তিলে যেটা গড়ে উঠতে দিয়েছি সেটার জন্য আমরা কি করেছি? প্রশাসন যেমন তড়িৎ গতিতে আমাদের এই দাবির প্রেক্ষিতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একটা ব্যবস্থা নিয়েছে সেটাকে আমরা সাধুবাদ জানাই কিন্তু এটা যেন দেখানোর জন্য না হয়, প্রকৃত অর্থে ৫ কর্মদিবসের মধ্যেই সকল অছাত্র ও বহিরাগত এবং কুলাঙ্গাররা যেন এখান থেকে চলে যায় ।