নতুন ট্রেনে চড়ে ১১ নভেম্বর চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের নতুন রেলপথ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
চট্টগ্রাম :
বহুল আকাঙ্খিত-প্রতীক্ষিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের আগামী ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন তিনি টিকিট কেটে ট্রেনে ভ্রমণ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী যে ট্রেনের মাধ্যমে কক্সবাজার রেলপথের উদ্বোধন করবেন সেই ট্রেনটি মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তায় উদ্বোধনী ১৫ বগির সঙ্গে অতিরিক্ত আরো ৪টি বগি নিয়ে রওনা হয় ট্রেনটি।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, আগামী ১১ নভেম্বর দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথে প্রধানমন্ত্রী ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী ট্রেনে রয়েছে ১৫টি নতুন বগি। এই ১৫ বগির সঙ্গে আরো অতিরিক্ত ৪ বগি চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে ছেড়ে গেছে। ১৫ বগিতে যদি কোনো সমস্যা থাকে তাহলে অতিরিক্ত ৪ বগি থেকে যুক্ত করা হবে। ট্রেনে থাকা একটি ইঞ্জিনে যদি কোন ত্রুটি দেখা যায় সঙ্গে সঙ্গে অন্য ইঞ্জিন যাতে লাগানো যায় সেজন্য নেওয়া হয়েছে আরও অতিরিক্ত তিনটি ইঞ্জিন। ট্রেনে রেলের ঊর্ধতন কর্মকর্তা ছাড়াও পুলিশ, আরএনবি সদস্য সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই ট্রেন নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ইঞ্জিনসহ বগি সব ব্র্যান্ডনিউ। যা কোরিয়া থেকে আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের জন্য যাওয়া ট্রেনটি আপাতত কক্সবাজারের রামু স্টেশনে থাকবে। উদ্বোধনের দিন ট্রেনের সামনে-পেছনে দুটি ইঞ্জিন যুক্ত থাকবে। উদ্বোধনের ঠিক আগে রেললাইনে কোনো সমস্যা আছে কি না সেটা দেখতে একটি পাইলট ইঞ্জিন দিয়ে পরীক্ষা করা হবে। এরপরই মূলত প্রধানমন্ত্রী ট্রেনে উঠবেন। আমাদের সকল প্রস্তুতি শেষ। এখন উদ্বোধনের পালা।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর ১ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরুর কথা রয়েছে। এর আগে, রোববার (৫ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রথমবারের মতো একটি ট্রেন কক্সবাজার পৌঁছে। রেলপথ পরিদর্শন অধিদফতরের পরিদর্শক রুহুল কাদের আজাদের নেতৃত্বে একটি পরিদর্শন টিম নিয়ে ট্রেনটি কক্সবাজারে যায়।
জানা গেছে, আগামী ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী-কক্সবাজার নবনির্মিত রেলপথে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধনের জন্য সকালে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনে উপস্থিত হবেন। সেখানে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন উপলক্ষে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী ট্রেনে উঠে এই রেলপথ উদ্বোধন করবেন। পরবর্তীতে স্টেশন চত্বরে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ঐদিন প্রধানমন্ত্রী সকালে প্রথমে হেলিকপ্টারযোগে রামু যাবেন। রামু রেল স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে নবনির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ চলাচলের জন্য উদ্বোধন করে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন নামবেন। কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনে নেমে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন। এরপর সেখান থেকে মহেশখালীর মাতারবাড়িতে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন।
উল্লেখ্য, শুরুতে ‘দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ’ প্রকল্প নেয়া হয়। এতে মোট ১২৯ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণের কথা ছিল। পরে রামু থেকে ঘুমধুম অংশের কাজ স্থগিত করা হয়। এখন চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৮ সালে এই রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
এ প্রকল্পের জন্য কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ৩৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে নয়টি রেলওয়ে স্টেশন, চারটি বড় ও ৪৭টি ছোট সেতু, ১৪৯টি বক্স কালভার্ট এবং ৫২টি রাউন্ড কালভার্ট। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ৩০ জুন। পরে এক দফা বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ করা হয় ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এতে ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রকল্পে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। বাকি ৪ হাজার ১১৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়েনি। এ প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চলায় নির্ধারিত সময়ের আগেই তা সমাপ্ত হতে যাচ্ছে। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি ‘ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। রেলপথটি নির্মিত হলে মিয়ানমার, চীনসহ ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের করিডোরে যুক্ত হবে বাংলাদেশ।