ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে ইউপিডিএফ’র ষড়যন্ত্র
বর্মাছড়িতে সেনা ক্যাম্প স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত

খাগড়াছড়ি : পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী খাগড়াছড়ির বর্মাছড়ি এলাকায় দীর্ঘমেয়াদী অভিযান পরিচালনা শুরু করার পরিপ্রেক্ষিতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) একটি পরিকল্পিত নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। সার্বিক পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এড়াতে সেনাবাহিনী বর্মাছড়িতে স্থাপিত অস্থায়ী পেট্রোল বেসটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তবে পার্বত্য অঞ্চলে স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনা অভিযান অব্যাহত থাকবে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে খাগড়াছড়ির রামসু বাজার এলাকায় ইউপিডিএফ’র সশস্ত্র সদস্যদের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলিতে তিন (০৩) জন পাহাড়ি যুবক নিহত হয়।
গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, ইউপিডিএফ ক্যাডাররা দুর্গম বর্মাছড়ি এলাকা থেকে এসে এই হামলা চালায়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকাগুলোতে দীর্ঘমেয়াদী অভিযানের অংশ হিসেবে গত ১৮ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ থেকে খাগড়াছড়ির বর্মাছড়ি এলাকায় সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করে। বর্মাছড়ি এলাকাটি ইউপিডিএফ’র শক্ত ঘাঁটি এবং দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র চোরাচালানের রুট হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।
অভিযানের অংশ হিসেবে সেনা টহল দল বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের খিরাম অংশের জমিতে (বর্মাছড়ি আর্য কল্যাণ বিহার হতে ৫০০ মিটার পশ্চিম দিকে) একটি অস্থায়ী পেট্রোল বেস স্থাপন করে। সেনাবাহিনীর এই উপস্থিতি ও অভিযানের কারণে ইউপিডিএফ ক্যাডাররা দ্রুত এলাকা ছেড়ে কালাপাহাড় ও ফটিকছড়ির দুর্গম অঞ্চলে অবস্থান নেয়।
দীর্ঘমেয়াদী সেনা অভিযান ও এর ফলে চাঁদা আদায় কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় ইউপিডিএফ তাদের চিরাচরিত কৌশল অবলম্বন করে। তারা জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে এবং বনবিভাগের জমিতে স্থাপিত অস্থায়ী বেসটিকে বর্মাছড়ি আর্য কল্যাণ বিহারের অংশ হিসেবে মিথ্যা দাবি করে। এরই ধারাবাহিকতায় ইউপিডিএফ এর নেতৃত্বে গত ২৪ অক্টোবর তারিখে অস্থায়ী পেট্রোল বেসের নিকট আনুমানিক ১০০০ জন মহিলা, শিশু ও পুরুষদের জমায়েত করা হয় এবং সেনা সদস্যদের সাথে দুর্ব্যবহার করা হয়। তারা স্মারকলিপি প্রদান করলেও তাদের দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণাদি উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়।
গোয়েন্দা তথ্যে জানা যায়, ইউপিডিএফ (প্রসিত বিকাশ খীসা/মূল) এর সশস্ত্র দলের অর্থ সম্পাদক অর্কিড চাকমা স্থানীয় একজন নেতাকে অস্থায়ী পেট্রোল বেসটি আর্য কল্যাণ বিহারের জমি না হওয়া সত্ত্বেও ‘ব্যাকডেট’ দিয়ে দলিল তৈরি করে দেওয়ার জন্য হেডম্যানের সাথে যোগাযোগের কথা জানায়। একই সাথে প্রসীত বিকাশ খীসা সেনাবাহিনীর অভিযানকে বিতর্কিত করতে আগামী ২৭-৩০ অক্টোবর ২০২৫ তারিখের মধ্যে আর্য কল্যান বিহারে ১০ থেকে ১৫ হাজার পাহাড়ি জনগণকে জোরপূর্বক যোগদান করিয়ে বড় আকারে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের নির্দেশ দেয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের একজন অধ্যাপক এবং গুইমারা উপজেলার জ্যোতিমারা বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের একজন ধর্মীয় নেতা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য ও সমর্থন প্রদানের পরিকল্পনা করেন।
ইউপিডিএফ এর এই পদক্ষেপ ‘মৃতদেহের রাজনীতি’ (Politics of body bags) এবং ‘ঘৃণার রাজনীতিকে’ (Hate politics) পুঁজি করে পার্বত্য অঞ্চলকে পুনরায় অশান্ত করে তোলার একটি রাষ্ট্রদ্রোহী ও নাশকতামূলক পরিকল্পনার অংশ। তারা সুচিন্তিতভাবে মহিলা, শিশু এবং যুবকদের ‘মানব ঢাল’ (Human shield) হিসেবে ব্যবহার করে সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব ও ধৈর্যের সীমাবদ্ধতাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।
সেনাবাহিনীর সহনশীলতা ও অবস্থান পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত :
আজ ২৭ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে বেসামরিক প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও মিডিয়ার উপস্থিতিতে এলাকাবাসীর নিকট তাদের দাবির স্বপক্ষের প্রমাণাদি দাখিলের আহবান করা হলেও তারা তা উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়। সেনাবাহিনী ইউপিডিএফ এর মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে দাবিকৃত অস্থায়ী সেনা পেট্রোল বেস যে বনবিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমির উপর স্থাপন করা হয়েছে, সে সংক্রান্ত দলিলাদি উপস্থাপন করে।

এই সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে, ইউপিডিএফ কর্তৃক সৃষ্ট একটি অবশ্যম্ভাবী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এড়াতে এবং সকল ধর্ম ও গোষ্ঠীর ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি সম্মান জানিয়ে সেনাবাহিনী বর্মাছড়িতে স্থাপিত অস্থায়ী পেট্রোল বেসটি অন্যত্র স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইউপিডিএফ সহ সকল রাষ্ট্র বিরোধী সংগঠনের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে মাতৃভূমির অখন্ডতা রক্ষার পবিত্র দায়িত্বে দৃঢ়তার সাথে অঙ্গীকারবদ্ধ। রাজনৈতিক অপকৌশল ও সমস্যার সমাধানে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি সংস্থার সমন্বিত এবং দ্রুত পদক্ষেপই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষা করতে পারে।




