দুর্গম পাহাড়ে জসিমের উন্নয়নের হাতছানি

স্টাফ রিপোর্টার, খাগড়াছড়ি:
মেধা, সাহস আর পরিশ্রমের ফলে ক্ষুদ্র ভিডিপি দলনেতা জসিম উদ্দিন এখন সফল উদ্যোক্তা সহ একজন সফলচাষী ও সমাজ উন্নয়ন কর্মী। নিবিড় সবজি চাষ, ফলমূল, গরু পালন করে নিজ কর্মস্থলের প্রতিটি সদস্যকে উদ্বুদ্ধ করে চলেছেন।
সফল উদ্যোক্তা, সমাজ উন্নয়ন কর্মী, লোগাং ইউনিয়ন ভিডিপি দলনেতা মো. জসিম উদ্দিন খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার লোগাং ইউনিয়নের ভিডিপি দলনেতা। তার তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে ১ম সন্তান মোঃ জুবায়ের উদ্দিন স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। দ্বিতীয় সন্তান মোঃ জাহিদ উদ্দিন ও তৃতীয় সন্তান জেদনি আক্তার প্রাথমিকের চতুর্থ ও প্রথম শ্রেণীতে লেখাপড়া করে।
তিনি জানান, বসতবাড়ির আশপাশে শাক-সবজি ও ফলমূলের বাগান গড়ে তোলা। বাড়ির আঙ্গিনায় বিভিন্ন ধরনের সব্জি চাষ শুরু করি। এতে সারা বছরের ফলমুল ও সবজির চাহিদা মিটে যাওয়ার পরও বাড়তি আয় হতে থাকে। প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগলেও সংসার চালানোর বোঝা কমে যাওয়ায় আর কোনো আপত্তি থাকেনি। লেখাপড়া করে শুধুই চাকরির পেছনে ছুটতে হবে বা চাকরিই করতে হবে এরকম কোনো কথা নেই। নিজের মেধা আর পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে চাইলে অন্যভাবে ও সফল হওয়া যায়।
তিনি বলেন, আমি ২৭/০৮/০৬ থেকে ১৬/০৯/০৬ মোট ২১ দিনের আনসার ভিডিপি একাডেমিক সফিপুর গাজীপুর প্রশিক্ষণ গ্রহন করি। এ ছাড়াও জেলা ভিত্তিক যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আওতায় পরিচালিত তিন মাস “গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি পালন, মৎস্য চাষ এবং কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ” কোর্সে ৭ জুলাই ২০০৪ হতে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৪ তারিখ পর্যন্ত প্রশিক্ষণ গ্রহন করে ক- বিভাগে উত্তীর্ণ হই। বর্তমানে আমার পারিবারিক গরু খামারে ২ টি গাভী, ৪ টি বাছুর, ০১টি ষাড় রয়েছে। এছাড়া আমার আম, মালটা ও সবজি ধানের জমি রয়েছে। আনসার ভিডিপি অফিসার ও কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তাগণদের সাথে আমার সর্বাক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। আমার সাফল্য অগ্রগতির সর্ম্পকে সর্বাক্ষণিক খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। নিজের আয় দিয়ে আমার সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে। তাই আমি আনসার ভিডিপি ও কৃষি ব্যাংক কাছে কৃতজ্ঞ।
জসিমের স্ত্রী মরিয়ম আক্তার বলেন, প্রত্যন্তাঞ্চলের শিক্ষিত লোক যখন ভালো চাকরি পাচ্ছিল না তখন খুবই দুশ্চিন্তায় পড়লেন। বাংলাদেশ আনসার ও ভি ডি পি ১নং লোগাং ইউনিয়ন দলনেতা হিসাবে যে সম্মানি পায় তাতে সংসারের ব্যয়ভার চালানো কঠিন হয়ে পরে। পরে তিনি কৃষি কাজে মনোনিবেশ করলে এখন আর কোনো চিন্ত নাই । প্রাকৃতিক পরিবেশে সম্পুর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে তিনি চাষ করেছেন।তার জমিতে কোনো রকম কীট নাশক ব্যবহার করা হয় না, ফলে একদম দেশীয় স্বাদে ক্রেতারা ফলমুল ও শাকসব্জি খেতে পারে। তার চাষ করা নানা রকমের সবজি ফলমুল ও গরু পালনে মোটামোটি ভালো টাকা আয় হয়। এতে সংসারের অভাব মিটে গেছে।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কিরন ভুঁইয়া জানান, জসিমের বাবাও ছিলেন একজন ভালো কৃষক। সে ১নং লোগাং ইউনিয়নের ভিডিপি দলনেতার দায়িত্ব পালনে পাশাপাশি কৃষি কাজ , গরু খামার করেন। এছাড়াও সামাজিক ভাবে মৃত ব্যক্তিদের স্বেচ্ছায় কবর খনন ও দাফন-কাফন, লোগাং বাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও সেচ্ছায় পাঠদান , মাদরাসাা ও হেফজখানার ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে নিজস্ব অনুদান বিতরণ, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছায় শ্রম প্রদান সহ জাতীয় নির্বাচন, স্থানীয় নির্বাচন সহ সরকারের জাতীয় সকল কর্মসূচীতে অংশ গ্রহন করতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো: ইব্রাহিম খলিল বলেন, উচ্চ শিক্ষিত এখন অনেকেরই অনুপ্রেরণা। চাকরি পেতে ব্যর্থ হলেও তিনি কৃষিতে সফল। তার মতো শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি কৃষি কাজে এগিয়ে আসেন তাহলে দেশে কৃষিতে বিপ্লব হবে। আমি প্রত্যককে উৎসাহ দেই কৃষি কাজ ও গাছ রোপনের জন্য বলি। যে কেউ পরার্মশ চাইলে আমি সহযোগিতা করি।