ঝগড়াঝাটির নাটক সাজিয়ে ছিনতাই; পুলিশের হাতে চক্রের ৪ সদস্য আটক
চট্টগ্রাম :
সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী ও প্রতারক দলের একটি চক্র ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে অত্যন্ত কৌশলে টাকা ছিনতাই কাজে লিপ্ত রয়েছে বেশ কিছুদিন যাবৎ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টাকা কে, কখন, কোন ব্যাংকে জমা দিতে যান, কে উত্তোলন করেন তারা তা পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর এই চক্রের সদস্যরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করা ব্যক্তিকে তাদের সুবিধামতো স্থানে নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি ও ঝগড়াঝাটি শুরু করে। আর সেই ঝগড়াঝাটির নাটকেই ওই ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয়। এমনই এক ঘটনায় ওই দুষ্টচক্রের চার সদস্যকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করেছে চট্টগ্রাম পুলিশ।
আটককৃতরা একরামুল আলম (৩৭), সাহেদ হোসেন মনা (২৪), ইয়াছিন ওরফে এরফান ওরফে সাব্বির (২৪) এবং রবিউল হোসেন ওরফে ইকবাল হোসেন ওরফে ইবু (২৩)। চক্রটি নগরের রিয়াজ উদ্দীন বাজারে গত ৯ জুলাই দিন দুপুরে ঝগড়াঝাটির নাটক সাজিয়ে এক ব্যবসায়ী কর্মচারীর কাছ থেকে ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনতাই করে। ডাকাতি করে নেওয়া টাকার মধ্যে সাত লাখ ১০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
১১ জুলাই ২০২৩ , মঙ্গলবার নগরের দামপাড়ায় সিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, আটককৃতরা সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র। তারা বড় বড় ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে এবং ব্যাংকিং লেনদেনের বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের টাকা কে, কখন, কোন ব্যাংকে জমা দিতে যান, কে উত্তোলন করতে যান, তাদের টার্গেট করে এবং তাদের গতিবিধি নজরদারিতে রাখে। একপর্যায়ে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে যাওয়ার সময় কিংবা উত্তোলন করে ফেরার সময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করে তাদের নির্ধারিত স্থানে নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাটির পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। টার্গেট ব্যক্তিকে তাদের মারামারির মধ্যে টেনে টাকা ছিনিয়ে নেন তারা। সাধারণ মানুষ বড় কোনো মারামারিতে কাউকে সহযোগিতা করেন না, কিংবা কোনো পথচারীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন না। এই সুযোগটি নেয় ছিনতাইকারীরা।
কোতোয়ালী থানার ওসি জাহিদুল কবীর জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে সাহেদ হোসেন মনার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও জখম করার সাতটি, একরামের বিরুদ্ধে দুটি চাঁদাবাজির মামলা, ইয়াছিন সাব্বিরের বিরুদ্ধে একটি ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, রোববার (৯ জুলাই ২০২৩) দুপুর ১২টার দিকে রিয়াজ উদ্দিন বাজারের নুর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি মোবাইল বিক্রি প্রতিষ্ঠানের বিপণন প্রতিনিধি মোরশেদ আলম ও সহকারী ম্যানেজার ত্রিদিব বড়ুয়া প্রতিষ্ঠানের ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে জুবিলী রোডের একটি ব্যাংকে জমা দিতে যান। পথিমধ্যে সোয়া ১২টার দিকে জুবিলী রোডের রয়েল টাওয়ারের সামনে ৭-৮ জন মিলে তাদের মারধর করে রক্তাক্ত করেন। এরপর ধারালো ছোরার ভয় দেখিয়ে টাকা ভর্তি ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান তারা।
এ ঘটনায় নুর এন্টারপ্রাইজের মালিক নুর মো. ইয়াছিন কবির বাদী হয়ে ওই দিনই কোতোয়ালী থানায় ডাকাতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে সাহেদ হোসেন মনাকে শনাক্ত করে। এরপর সোমবার দুপুরে নগরীর রউফাবাদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় মনাকে। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদে মনা ঘটনার কথা স্বীকার করেন এবং জড়িত অন্যদের বিষয়েও তথ্য দেন। একই সঙ্গে মনার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৪০ হাজার টাকা। পরবর্তীতে সোমবার বিকেলে সদর ঘাটের মাদারবাড়ি এলাকা থেকে একরামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক অভিযান চালিয়ে হোটেল প্যারামাউন্টের একটি কক্ষ থেকে লুণ্ঠিত টাকার মধ্যে ছয় লাখ ৭০ টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে অভিযান চালিয়ে কর্ণফুলী থানাধীন চরলক্ষ্যা সৈন্যের টেক এলাকা থেকে ইয়াছিন সাব্বির ও রবিউল ইভুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।