চট্টগ্রাম :
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহতের ঘটনার পর উত্তেজিতদের হামলা, ভাংচুরসহ তান্ডবের ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। চবি কর্তৃ পক্ষের পক্ষ থেকে হাটহাজারী থানায় দায়ের করা মামলায় সাতজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত নামা আরো ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। গত শনিবার গভীর রাতে থানায় এ দুটি মামলা দায়ের হলেও আসামীদের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ বা চবি কর্তৃপক্ষের কেউ।
প্রসঙ্গত: বৃহস্পতিবার ( ৭ সেপ্টেম্বর রাতে) ওই দূর্ঘটনার পর শাটল ট্রেনের লোকোমাষ্টার ( ড্রাইভার) ও কর্মরত স্টাফদের মারধর করার পর বন্ধ থাকা শাটল ট্রেন চলাচলও বন্ধ রেখেছিলেন রেলের স্টাফরা। রবিবার ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পর সমঝোতা হলে বিকেল থেকে শাটল ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন জানিয়েছন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ ও প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে চাঁদা দাবি ও ভাঙচুরের অভিযোগে মামলাগুলো দায়ের করেন। গত ৭ সেপ্টেম্বর) রাতে হাটহাজারীর চৌধুরীহাট এলাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গোমী চলন্ত শাটল ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে অন্তত ১৬ শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ দূর্ঘটনার খবরে সে রাতেই ক্যাম্পাসে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে ছাত্ররা বেরিয়ে মূল ফটক অবরুদ্ধ করে অবস্থান নেন কয়েক’শ শিক্ষার্থী। ফটকের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে তারা বিক্ষোভ করতে থাকেন। শুধু তাই নয় মিছিল নিয়ে রাত সোয়া ১১টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনে গিয়ে ভাঙচুর করেন। বাসভবনে গ্যাসের সঞ্চালন লাইন ভেঙ্গে ফেলেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ি, শিক্ষক ক্লাব এবং পরিবহন দফতরে ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। ঘটনাস্থলে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। তাদের বহনকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের শিক্ষক ক্লাবে আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা।
রাত পৌনে ১২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দফতরে থাকা শিক্ষক বাস ও কয়েকটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর করা হয়। ক্যাম্পাসের ভেতরে গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ঘটনাস্থল অতিক্রম করতে গিয়ে বেশ কিছু প্রাইভেট কার, অটোরিকশা, ট্রাক ভাঙচুরের শিকার হয়। রাত পৌনে ১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেইট দিয়ে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা প্রবেশ করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে শিক্ষক ক্লাবে আটকে থাকা প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরদের উদ্ধার করেন। এরপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মূল ফটক খুলে দেন।
রবিবার রেলওয়ে কর্তপক্ষ, রেলওয়ের রানিং স্টাফ নেতৃবৃন্দ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে নিরাপত্তার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। এরপর বেলা তিনটার দিক থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। তবে রেলওয়ের কর্মচারীদের পক্ষ থেকে শাটল ট্রেন চালানোর জন্য ছয়টি শর্ত দেয়া হয়। এগুলো হল— পাহাড়তলী থেকে প্রতিটি ইঞ্জিন সঙ্গে রেলওয়ে পুলিশের (জিআরবি) কমপক্ষে চারজন সদস্য দেয়া, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, রেলওয়ে কর্মচারীদের প্রতিনিধি ও পুলিশ প্রশাসন মিলে বৈঠক করা ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলোচনা করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশনে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা, ট্রেনের ছাদে ও ইঞ্জিনে শিক্ষার্থী উঠলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেন ব্যবস্থা নেয়, ছাত্রদের সচেতন করা এবং লোকমাস্টারদের লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। এ সব দাবি দাওয়ার বাস্তবায়নের ব্যাপারে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও চবি কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিলে রেল কর্মচারিগন শাটল ট্রেন চালাতে রাজী হন।