Breakingচট্টগ্রাম অঞ্চলসারাদেশ

চট্টগ্রামে কোরবানীর চামড়া নিয়ে ব্যবসায়ীদের নয়-ছয় বন্ধ

চট্টগ্রাম:
এবার পশুর চামড়া নিয়ে নয়-ছয় করতে পারেনি চট্টগ্রামে চামড়া ব্যবসায়ীরা। বেশ সুশৃঙ্খল ভাবেই এবার কোরবানীর পশুর চামড়া বেচাকেনা হয়েছে এবং হচ্ছে। এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত দের সাথে কথা বলে জানা গেছে- চামড়ার মৌসুমি সংগ্রহকারী-আড়তদার এবং তাদের প্রতিনিধি সিন্ডিকেটকে হটিয়ে দিয়েছে আনজুমান এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের অঙ্গ সংগঠন গাউছিয়া কমিটি।

 

কয়েক হাজার মাদরাসার ছাত্র ট্রাক নিয়ে নগরীর বিভিন্ন অলিগলি ও গ্রাম থেকে চামড়া সংগ্রহ করেছেন। কোরবানি দাতাদের কাছ থেকে বিনামূল্যেই চামড়া পেয়েছেন তারা। এর ফলে চামড়া সংগ্রহ ও কেনাবেচার ক্ষেত্রে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও কাঁচা চামড়ার আড়তদারেরা বলেছেন, এবার কোরবানির পরিমাণ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কম হয়েছে।

 

চট্টগ্রামে কোরবানীর দিন দুপুর থেকে নগরীর কাঁচা চামড়া সংগ্রহের স্থানগুলোতে ঘুরে এবারও চিরচেনা দৃশ্যের দেখা মেলেনি। অলিগলির মুখে কিংবা সড়কে কাঁচা চামড়া নিয়ে তরুণ-যুবকদের জটলা ছিল না। নগরীর চৌমুহনী কর্ণফুলী বাজার, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ঈদগাহ বৌবাজারসহ যেসব স্পটে কাঁচা চামড়া এনে জড়ো করা হয়, সেখানে গতবছরের মতো এবারও তেমন ভিড়-হাঁকডাক দেখা যায়নি। কিন্তু এর আগে চট্টগ্রামে কোরবানির কাঁচা চামড়ার বাজার প্রতিবছর ‘কয়েকটি চক্রে’ নিয়ন্ত্রণ হতো। কোরবানি দাতাদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ করতেন এলাকার উঠকি তরুণ-যুবকরা, যাদের মৌসুমি সংগ্রহকারী বলা হয়। তারা কয়েকজন মিলে ৫-৬টি করে চামড়া সংগ্রহ করতেন। তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনে নিতেন বড়-মাঝারি মানের ব্যবসায়ীরা, যারা শুধু কোরবানির সময়ই চামড়া কিনতে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেন এবং সেই চামড়া বিক্রি করেন আড়তদারের কাছে। সেই ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া বিক্রি করতেন আড়তদারের প্রতিনিধির কাছে। প্রতিনিধির কাছ থেকে চামড়া যেত আড়তদারের ডিপোতে।

 

তবে সেসব ‘ চক্র’ ২০২০ সাল থেকে ভেঙ্গে যায়। ২০১৯ সালে আড়তদার ও তাদের প্রতিনিধিরা ‘অস্বাভাবিক দরপতন’ ঘটিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনা বন্ধ রেখেছিলেন। এতে কাঁচা চামড়া সড়কে ফেলে দিয়ে তাদের বিদায় নিতে হয়েছিল। ২০২০ সালে মৌসুমি সংগ্রহকারীর সংখ্যা অর্ধেকেরও কমে নেমে আসে। কাঁচা চামড়ার বাজারের ওপর প্রায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন আড়তদার ও তাদের প্রতিনিধিরা। ২০২০ সালেও মৌসুমি সংগ্রহকারীদের একই কৌশলে চামড়া ফেলে যেতে বাধ্য করা হয়। এরপর ২০২১ সাল থেকে কাঁচা চামড়ার বাজারের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ চলে যায় আড়তদার ও তাদের প্রতিনিধিদের হাতে। কিন্তু ২০২২ সালে এসে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ ও কেনাবেচার নিয়ন্ত্রণ নেয় সুন্নী মতাদর্শে বিশ্বাসী সংগঠন ‘গাউছিয়া কমিটি’, যা অব্যাহত আছে এবারও। চামড়া সংগ্রহে শৃঙ্খলা ফিরে আসায় আড়তদার এবং সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোও তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

 

কোরবানির পর বৃহস্পতিবার দুপুরে চৌমুহনী কর্ণফুলী বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, হাতেগোণা তিন-চারজন চামড়া সংগ্রহকারী নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে রিকশা-ভ্যানে আসা কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করছেন। বিকেল ৪টার পর্যন্ত সেখানে মাত্র ৭টি চামড়ার স্তূপ দেখা গেছে। সব মিলিয়ে হাজারখানেকের কিছু বেশি চামড়া ছিল। চামড়া সংগ্রহকারীরা জানান, এক থেকে দেড় লাখ টাকা দামের গরু অর্থাৎ ছোট গরুর চামড়া তারা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় কিনেছেন। আর তিন লাখ টাকা বা এর বেশি দামের গরুর চামড়া তারা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় কিনেছেন। ছাগলের চামড়ার কোনো দামই নেই। তারা বলেন, ‘এবার কোরবানি কম হয়েছে। চামড়া খুব কম আসছে। গরু, ছাগলের দাম বেশি ছিল। মানুষের পকেটে টাকা নেই। কোরবানি দিতে পারেনি। এবার গাউছিয়া কমিটিও চামড়া নিয়ে গেছে। তারপরও শহরের বিভিন্ন পাড়া থেকে ছেলেপেলেরা অল্প কিছু চামড়া এনেছে।

Related Articles

Back to top button