খাগড়াছড়িতে ফের পাহাড়ী ঢলের বন্যা
স্টাফ রিপোর্টার , খাগড়াছড়ি॥
টানা বৃষ্টিতে তিনমাসের ব্যবধানে তিনবার বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে বিপর্যস্ত খাগড়াছড়িবাসী। খাগড়াছড়ি পৌরসভায় ২৫টি ও দীঘিনালা উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে বন্যায় প্লাবিত অঞ্চলের পানিবন্দিদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য প্রায় ১০০টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে আশ্রয় নিয়েছে হাজার হাজার মানুষ।
মঙ্গলবার ২০ আগস্ট দুপুর থেকে চেঙ্গী নদী ও মাইনি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে জেলা সদরের পৌর এলাকার মুসলিমপাড়া, শান্তিনগর, শব্দমিয়াপাড়া, খবংপুড়িয়া, রাজ্যমনিপাড়া, ফুটবিল, বটতলীসহ কয়েকটি এলাকার হাজারো পরিবার পানিবন্ধী হয়ে পড়ে। শহরের পৌর বাস টার্মিনাল, নিচের বাজার ও আশপাশ এলাকা প্লাবিত হয়ে পানির নিচে তলিয়ে যায়। খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়ক দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় মঙ্গলবার ২০ আগস্ট বিকেল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকে। সদর উপজেলার কমলছড়ি ও গোলাবাড়ি ইউনিয়নের গঞ্জপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে শত শত ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে ডুবে যায়। গৃহবন্ধী হয়ে পড়ে নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ।
তবে চেঙ্গী নদীর পানি কিছুটা কমে গেলে বুধবার আশ্রয় কেন্দ্র থেকে কেউ কেউ বাড়ি-ঘরে ফিরে গেলেও এখনো টানা বৃস্টি অব্যাহত থাকার কারণে আবারও বন্যার শঙ্খায় অনেকেই রয়েগেছে আশ্রয়কেন্দ্রে।
এদিকে, ভয়াবহ বন্যার পাশাপাশি কিছু কিছু জায়গায় পাহাড় ধসের ঘটনাও ঘটেছে। জেলা সদরের শালবন এলাকায় পাহাড় ধসে ঘরের ভিতরে মাটি চাপা পড়ে আবু হানিফ (৬০) নামে একজন গুরুতর আহত হয়। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী কয়েকশত পরিবারের মাঝে পাহাড় ধসের আতংক বিরাজ করছে। এছাড়া জেলা সদরের কলাবাগান, হরিনাথ পাড়া, শালবাগান, রসুলপুর এলাকায় পাহাড় ধসের বেসি ঝুঁকি রয়েছে। খাগড়াছড়ি পৌরসভার হিসেব মতে পৌর এলাকায় প্রায় দুইশত পরিবার পাহাড় ধসের ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করে।
অপরদিকে, টানা ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় জেলার দীঘিনালা উপজেলায় অসংখ্য গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঢলের পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় গতকাল বিকাল থেকে বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বন্যায় উপজেলার মেরুং, কবাখালী ও বোয়ালখালী ইউনিয়নে কয়েকশো পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন কতৃক ২১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
বন্যায় হাজার হাজার হেক্টর রোপা-আমন ও বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে। পর পর তিনবারের বন্যায় কৃষকসহ সাধারন মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মেরুং ইউনিয়নের ছোট মেরুং বাজারসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। তাছাড়াও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বাঘাইছড়ি ও লংগদু সড়কে যাতায়াতকারি অসংখ্য সাধারন মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।
সাজেক সড়কের কবাখালী, বাঘাইহাট ও মাচালং বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে সাজেকে ঘুরতে যাওয়া প্রায় দুই শতাধীক পর্যটক আটকা পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসা পরিবারগুলোর মাঝে শুকনো খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুনুর রশীদ।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মোঃ সহিদুজ্জামান জানান, প্রবল বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যা দুর্গত ও পাহাড়ের ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করে বলে দেয়া হয়েছে। যেকোন ধরণের দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে ।