Breakingচট্টগ্রাম অঞ্চলসারাদেশ

খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী হেডম্যান কার্বারী নেটওয়ার্ক সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার,খাগড়াছড়ি :
পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত ভূমি ব্যবস্থাপনায় পার্বত্য চুক্তির আলোকে ভূমিতে নারীর অধিকার নিশ্চিতকরণ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী হেডম্যান কার্বারী নেটওয়ার্ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ রবিবার দুপুরে খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের অডিটোরিয়ামে সিএইচটি নারী হেডম্যান কার্বারী নেটওয়ার্ক এর উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী হেডম্যান কার্বারী নেটওয়ার্ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

 

সম্মেলনে সিএইচটি নারী হেডম্যান কার্বারী নেটওয়ার্কের সভাপতি জয়া ত্রিপুরা’র সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা।

 

নারী হেডম্যান কার্বারীরা পার্বত্য এলাকায় পৈতৃক সম্পত্তি থেকে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও তাদের ভূমি অধিকার,কর্মক্ষেত্রে নারীতের অগ্রাধিকার সহ বিভিন্ন বিষয়ে দাবি জানান।

 

এ সময় বক্তব্য রাখেন মং সার্কেল রানী উখেংচিং মারমা,পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য রক্তোৎপল ত্রিপুরা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রুমানা আক্তার, জেলা পরিষদের সদস্য শেফালিকা ত্রিপুরা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেন, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট ভবতোষ দেওয়ান, এএলআরডি উপ-নির্বাহী পরিচালক রওশন জাহান মনি, জেলা হেডম্যান কার্বারি এসোসিয়েশনে উপদেষ্টা ক্ষেত্র মোহন রোয়াজা সহ আরও অনেকে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী হেডম্যান কার্বারী নেটওয়ার্ক সম্মেলনে ৭টি দাবি পেশ করেন।
দাবি সমূহ :

১.সার্কেল চিফ কর্তৃক নতুন নিয়োগকৃত সকল নারী কার্বারীদের সরকারি সম্মানী ভাতা নিশ্চিত করা।

২.নারী হেডম্যান কার্বারীদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা।

৩. ২০১৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয় হতে ‘প্রস্তাবকৃত রাজা, হেডম্যান ও কার্বারীদের ভাতা ঘোষনা অনুযায়ী দ্রুত কার্যকর করা।

৪. হেডম্যান ও কার্বারীদের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে প্রয়োজনীয়তা নিরিখে ধাপে ধাপে পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে অফিস নির্মাণ করা।

৫.পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

৬. ভূমিতে পার্বত্য নারীর উত্তরাধিকার নিশ্চিত করা।

৭.পার্বত্য চট্টগ্রামের ভিসিএফ (ভিলেজ কমন ফরেস্ট) বন্দোবস্তী প্রদানে পার্বত্য জেলা পরিষদ ও জেলা
প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা।

 

জানা যায়, সিএইচটি নারী হেডম্যান কার্বারী নেটওয়ার্ক পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী হেডম্যান কার্বারীদের একটি সমন্বয়কারী সংগঠন। এটি নারী হেডম্যান-কার্বারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধি, উত্তরা ধিকার, ভূমির অধিকার নিশ্চিতসহ বিভিন্ন দাবী আদায়ের লক্ষ্যে সম্মেলন, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, লবি, কেম্পেইন, সেমিনার, প্রকাশনা, সমন্বয়, সাংবাদিক সম্মেলন ইত্যাদি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান রাজা, হেডম্যান এবং কার্বারী প্রতিষ্ঠান যুগযুগ ধরে এই অঞ্চলের সামাজিক শৃংখলা রক্ষার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের পাশাপাশি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, বন ও প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষা, খাজনা আদায়, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে নারী নেতৃত্ব না থাকায় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়ায় নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহনের সুযোগের অভাবে এই অঞ্চলের নারীরা পুরুষের তুলনায় যেমন অনেক পিছিয়ে রয়েছে এবং ঠিক তেমনি সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার না থাকায়, ভূমিতে অধিকার না থাকায় নারীদের থাকতে হচ্ছে পরিবারের উপর নির্ভরশীল ও গুরুত্ব হীন হয়ে পড়েছে । সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী অধিকার সচেতন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, এনজিও দের যৌক্তিক দাবীর প্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার অংশ হিসেবে চাকমা সার্কেল ও মং সার্কেলের পক্ষ থেকে প্রতিটি মৌজায় নারী কার্বারী নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এ পর্যন্ত চাকমা সার্কেলে ৪২৫ জন, মং সার্কেলে ১৬৬ জন এবং বোমাং সার্কেলে ১৯ জন নারী কাজ করছেন।

Related Articles

Back to top button