কুবিতে প্রশাসনের আশ্বাসে অনশন ভাঙলেন ৭ শিক্ষার্থী
চেঙ্গী দর্পন , কুবি প্রতিনিধি :
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) আমরণ অনশন স্থগিত করেছেন ৭ শিক্ষার্থী। সোমবার (২০ মার্চ) বিকেল সাড়ে তিনটায় প্রায় সাড়ে ২৩ ঘন্টা পরে প্রশাসনের আশ্বাসে জুস পান করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড মোঃ আসাদুজ্জামান।
আন্দোলনের মুখপাত্র জাহিদুল ইসলাম জানান, আমরা প্রশাসনের সাথে আলোচনায় অংশ নিয়েছি। আমাদের ৪ টি দাবী মেনে আজকের মধ্যে প্রশাসন দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ স্থগিত করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। বাকি দাবিগুলোর বিষয়ে আমরা সন্তোষজনক আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন স্থগিত করেছি। তবে আমরা দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি না দেখলে পুনরায় আন্দোলন চালিয়ে যাব।
এর আগে রবিবার বিকেল ৪ টায় অনশনে শুরু করেন সাময়িক বহিষ্কার হওয়া লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী এনায়েত উল্লাহ, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী সালমান চৌধুরী হৃদয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ শাহরিয়া ও কাজল হোসাইন। পরে রাত ৮ টায় কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান পলাশ তাদের সাথে অংশ নেয়। দাবী আদায় না হওয়ায় সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টায় ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী লাবিবা ইসলাম এবং দুপুর একটায় মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী রবি দাস অনশন শুরু করেন।
অনশন শুরুর পর থেকে প্রশাসনের পক্ষে থেকে একাধিকবার শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করার কথা জানালেও সোমবার দুপুর একটার দিকে অনশন কারীদের পক্ষ থেকে আন্দোলনের মুখপাত্র জাহিদুল ইসলাম, সমন্বয়ক ইমাম হোসাইন মাসুম এবং পাপন মিয়াজি আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে ছিল, তিন শিক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনায় হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার, প্রক্টরের অপসারণ, বহিষ্কৃত দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা এবং নিরাপদ ক্যাম্পাস সুনিশ্চিত করা।
অনশনরত শিক্ষার্থী লাবিবা ইসলাম বলেন, আমরা যে পাঁচটি দাবি আদায়ে অনশন করেছি তারমধ্যে চারটি দাবি প্রশাসন অতি দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে আমরা আন্দোলন শিথিল করেছি। তবে আমরা আশানুরূপ ফলাফল না পেলে আরও জোরালো আন্দোলনের দিকে যাব।
এর আগে অনশন চলমান অবস্থায় শিক্ষার্থীদের সাথে প্রক্টরিয়াল টিম ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, ডিন ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা এসে কথা বলেছেন।
প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, শিক্ষার্থীদের সাথে আমাদের মাঝে সকল বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। এবিষয়ে আর কিছু বলার নেই। প্রক্টরের অপসারণের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, মূলত ছাত্রলীগের একটি পক্ষ আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে অকারণে পদত্যাগ চেয়েছে। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিয়েছে তার কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।
এসময় উপ-উপাচার্য বলেন, আমাদের আন্তরিকতার কোন অভাব নাই। তোমরা তোমাদের শিক্ষা জীবনে ফিরে যাও। আমরা তোমাদের সাথে আছি। বিশ্ববিদ্যালয় তোমাদের এবং আমাদের। এখন আন্দোলন শেষ, এইখান থেকে যাবা তারপর যদি কোন ঘটনা ঘটে তাহলে এটার ব্যবস্থা আমরা নিবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সবাইকে আইডি কার্ড নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের কথা জানিয়েছি। আর অছাত্র এবং অবৈধ কেউ হলে থাকতে পারবে না। যে দুইজন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়ছে সেটা স্থগিত থাকবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তাদের রিপোর্ট অনুসারে সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর প্রক্টরের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রমাণ দিতে পারলে আমরা ব্যবস্থা নিব।