কাপ্তাই হ্রদে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে রাঙ্গামাটিতে বৈসাবি উৎসব শুরু
স্টাফ রিপোর্টfর, রাঙ্গামাটি :
পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সপ্তাহ দিনব্যাপী বৈসাবি উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে আজ থেকে রাঙ্গামাটিতে শুরু হয়েছে চাকমাদের বিজু, ত্রিপুরাদের বৈসুক ও মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব।
শুক্রবার (১২এপ্রিল) সকালে রাঙ্গামাটির গর্জনতলীতে ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্য ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে ত্রিপুরাদের বৈসুক উৎসবের উদ্বোধন করেন, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার। এসময় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রæ চৌধুরী, জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল ত্রিপুরা, ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিদ্যুৎ শংকর ত্রিপুরাসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে রাঙ্গামাটি রাজবাড়ী ঘাটে বৈসাবি উদযাপন কমিটির উদ্যোগে ভোরে গ্রামের তরুণ তরুণীরা ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে তিন দিন উৎসবের সূচনা করা হয়। রাজবাড়ী ঘাটে বৈসাবি উৎদযাপন কমিটির উদ্যোগে ফুল বিজুর উদ্বোধন করেন বৈসাবি উদযাপন কমিটির আহবায়ক প্রকৃত রঞ্জন চাকমা, সদস্য সচিব ইন্টু মনি চাকমাসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থত ছিলেন।
ফুল ভাসানো দেখতে আসা এক বাঙ্গালী নারী সুলতানা বেগম বলেন্, পার্বত্য অঞ্চলের সামাজিক উৎসব বৈসাবি যেন সকল সম্প্রদায়ের উৎসব। ফুল ভাসাতে এসে এখানে মনে হচ্ছে না আমরা বাঙ্গালী। আমাদের মনে হচ্ছে আমরাও এদের একজন।
বিজু, বৈসু, সাংগ্রাইং-২০২৩ উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টু মনি চাকমা জানান, রাঙ্গামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় এবছর উৎসবের উচ্ছ্বাস বয়ে যাচ্ছে। এই ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়েই শুরু হচ্ছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলোর তিন দিনব্যাপী প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু। আগামীকাল শনিবার মূল বিজু পালিত হয়। রবিবার গোজ্যেপোজ্যে দিন পালিত হবে যার যার ঘরে।
রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন পার্বত্য অঞ্চলের সকল সম্প্রদায়ের প্রাণের উৎসব বৈসাবি উৎসব। পার্বত্য অঞ্চলের মুসলমানদের পবিত্র ঈদ উল ফিতর, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর বৈসাবী উৎসব ও বাঙ্গালীদের বাংলা নববর্ষকে ঘিরে পাহাড়ের প্রতিটি ঘরে ঘরে আনন্দ বয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে পাহাড়ের সকল সম্প্রদায়ের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে পার্বত্য অঞ্চলের এই উৎসবের মধ্যেমে পার্বত্য অঞ্চলে সকল সম্প্রদায়ের মাঝে সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় হবে। পার্বত্য অঞ্চলের সকল সম্প্রদায় যাতে এক হয়ে সন্দুর একটি আগামীর বাংলাদেশ গড়তে পারে সেই দিকে আমাদের সকলের প্রত্যাশা থাকবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সভাপতি দীপংকর তালুকদার বলেন, বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনার দেশে রূপান্তর করেছে। সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক চেতনার মুল অংশ। পার্বত্য চট্টগ্রামে ১১ টি জাতি গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের বসবাস। এখানে বাঙ্গালী, চাকমা, মারমা ত্রিপুরা, পাংখোয়া বম সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বসবাস। আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে পাহাড়ের মানুষও উজ্জীবিত। এসময় তিনি সকলকে বৈসাবির শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসনোর মধ্যেমে দিয়ে পুরো বাংলাদেশ ও বিশে^ শান্তির বার্তা নিয়ে আসবে এই বার্তা আমাদের সকলের মাঝে ছড়িয়ে যাবে। পৃথিবী থেকে সকল হানাহানি, দুঃখ, গ্লানি, মারামারি, হিংসা দুর হবে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ১২টি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাংলাবর্ষকে বিদায় জানানোর এ অনুষ্ঠান তাদের প্রধান সামাজিক উৎসব হিসেবে বিবেচিত। এই উৎসব চাকমা জনগোষ্ঠী বিজু নামে, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী মানুষ বৈসুক, মারমা জনগোষ্ঠী মানুষ সাংগ্রাই, তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী বিষু, কোনো কোনো জনগোষ্ঠী বিহু নামে পালন করে থাকে। আগামীকাল মুল বিজুর উৎসব পালন করবে পাহাড়ের জনগোষ্ঠী। ঐতিহ্যবাহী পাঁজন রান্না করে অতিথি আপ্পায়নের মধ্যদিয়ে মুল বিজুর আনুষ্ঠানিকতা। আগামী ১৬ এপ্রিল থেকে রাঙ্গামাটি চিংহ্লা মং মারী ষ্টেডিয়ামে সাংগ্রাই জলোৎসবের মধ্যদিয়ে পাহাড়ের এই উৎসবের আনুষ্টানিকতা শেষ হলেও এই উৎসব চলবে পুরো মাস জুড়ে।