আখাউড়ার হাসপাতালে যমজ সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভাসমান মা
চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক , আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া :
রুমা আক্তারের বাড়ি ভোলার লাল মোহন উপজেলায় । সৎ মায়ের অত্যাচারে ছোট থাকতেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে হয় । তারপর বেড়ে উঠা এখানে সেখানে। কয়েক বছর আগে বিয়ে হয় হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার এক যুবকের সাথে। স্বামীকে নিয়ে থাকতেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায়। গত কয়েক মাস আগে স্বামী বড় সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে আরেক বিয়ে করে অন্যত্র চলে যায়। সে জানে না তার স্বামী কোথায়।
৩০ বছর বয়সি রুমা আক্তারের কোল জুড়ে এখন ফুটফুটে দুই সন্তান। জিলহজ মাসকে সামনে রেখে চিকিৎসকদের পরামর্শে সন্তানদের নাম রেখেছেন হাসেন ও হোসেন। নিজে এখানে সেখানে বেড়ে উঠলেও ছেলে সন্তানদের কিভাবে লালন পালন করবেন সে নিয়ে দুশ্চিন্তায় রুমা।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, এই মুহুর্তে রুমাকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে হয়তো হাসপাতালে তাকে বেশি দিন রাখা সম্ভব হবে না। দুই সন্তান সহ রুমা এখন ভালো আছে।
জানা যায়, আখাউড়ার খড়মপুরে আসার সূত্র ধরে দিন মজুর ইব্রাহিম মিয়ার সঙ্গে রুমার বিয়ে হয়। এক কন্যা সন্তান নিয়ে ভালোই কাটছিলো তার সংসার। দ্বিতীয় গর্ভধারণের পর প্রায় নয় মাস আগে কন্যাকে নিয়ে স্বামী ইব্রাহিম চলে যায়। তখন মাথায় বাজ পড়ে। ভাড়া বাসা ছেড়ে আশ্রয় নেন আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে। অন্যের কাছে হাত পেতে চলতো পেট। সুমি আক্তার নামে এক নারীকে মা ডাকতেন। সেই নারী বুধবার রাত ১১টার দিকে তাকে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। হাসপাতালেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দুই ছেলে সন্তানের জন্ম দেয় রুমা আক্তার।
বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, দুই সন্তানকে কোলে নিয়ে বসে আছেন রুমা আক্তার। সন্তানদের নাম কি রেখেছেন জানতে চাইলে মুখে হাসির ভাব। পরক্ষণেই তা মিটিয়ে যায় সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা জানতে চাইলে।
হাসপাতালের ধাত্রী (মিডওয়াইফ) তানিয়া আক্তার ও রোকসানা আক্তার বলেন,‘প্রসব করাতে গিয়ে দেখি টুইন বেবি। কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করানোয় প্রসূতি নারীরও বিষয়টি জানা ছিলো না। সমস্যা দেখা দেয় যখন দেখা যায় ওই নারীর এক সন্তান গর্ভে উল্টো অবস্থায় আছে। আগে এক সন্তান স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হওয়ায় সৃষ্টিকর্তার দয়ায় ভালো ভাবেই প্রসব করানো যায়। রাত ১১টা ১০ মিনিট ও ২০ মিনিটের সময় ওই নারী দু’সন্তান প্রসব করেন। হাসপাতালের সেবিকা (নার্স) সানজিদা মাহমুদ বলেন, ‘মা ও শিশু দু’জনেই ভালো আছে। এক শিশুর ওজন কম হওয়ায় তাকে অবজারভেশনে রাখা হয়। হাসপাতালের পক্ষ থেকে দুই সন্তানকে নতুন কাপড় দেওয়াসহ সব ধরণের সহযোগিতা করা হচ্ছে।’
চিকিৎসক নুরে সাবা বলেন, ‘অসহায় ওই নারীর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রসব হওয়ায় আমি আনন্দিত। সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিকতা ও সহযোগিতায় এ কাজটি সহজে করা গেছে।’ এজন্য তিনি সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া আদায় করেন।
সুমি আক্তার নামে এক নারী বলেন, ‘আমাকে মা ডাকে রুমা। মঙ্গলবার রাতে আমি একজনের জন্য ভাত নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে কান্না করতে দেখি। তখন সে সমস্যা হচ্ছিল বলে জানায়। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে আখাউড়া হাসপাাতলে নিয়ে যাই। এখানে সকলের আন্তরিকতায় ও সহযোগিতায় রুমা দুই পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়।’
রুমা আক্তার বলেন, ‘মেয়েটাকে নিয়ে স্বামী চলে যাওয়ার পর স্টেশনে আশ্রয় নেই। ছোট বেলা থেকেই আমি বাবা-মা হারা। সৎ মায়ের অত্যাচারে ঘর থেকে বের হয়ে যাই। আমাদের পাঁচ বোনের মধ্যে এক বোন মারা গেছে। বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই।’ তিনি জানান, নবজাতকদের নিয়ে কোথায় যাবেন সেটা জানেন না। সবাই মিলে যেন অন্তত একটা মাথা গোঁজার ঠাঁয় করে দেয় সেই অনুরোধ রাখে সে। হাসপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শে সন্তানদের নাম হাসেন ও হোসেন রেখেছেন বলে জানান।
আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিমেল খান ভোরের কাগজকে বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে ওই নারী ও নবজাতকদের সব ধরণের সেবা দেওয়া হচ্ছে। সবাই আন্তরিকভাবেই অসহায় ওই নারী ও তার সন্তানদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।