Breakingচট্টগ্রাম অঞ্চলসারাদেশ

হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে মা মাছ ; রেকর্ড পরিমান ডিম সংগ্রহের আশা

চট্টগ্রাম :
বহু প্রতীক্ষার পর অবশেষে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে পূর্ণাঙ্গভাবে ডিম ছেড়েছে মা মাছ।

১৮ জুন ২০২৩ রোববার দিবাগত মধ্যরাতে জোয়ারের সময় হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট থেকে রাউজানের রামদাশ মুন্সির ঘাট পর্যন্ত হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে মা মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করে। তিন মাস ধরে জাল-নৌকা নিয়ে নদীতে অপেক্ষার পর ‘কার্প জাতীয়’ প্রজনন সক্ষম মাছ ডিম ছাড়ার পর ডিম সংগ্রহের উৎসবে মেতে ওঠেন আহরণকারীরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, রোববার দিবাগত রাতে দিনের দ্বিতীয় জোয়ারে হালদায় ডিম ছেড়েছে রুই জাতীয় মাছ। স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীরা হালদা নদীর হাটহাজারী ও রাউজান অংশের আজিমের ঘাট, অংকুরিঘোনা, কাগতিয়ার মুখ, গড়দুয়ারা নয়াহাট, রামদাশ মুন্সির ঘাট, মাছছুয়াঘোনা, সত্তার ঘাট, নাপিতের ঘোনা, কাটাখালী, আমতুয়াসহ বিভিন্ন ঘাট এলাকা থেকে ডিম সংগ্রহ করেছেন। চবি’র হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মো. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘মার্চের শেষভাগ থেকে ডিমের জন্য নদীতে অপেক্ষা শুরু হয়। এবার ১৫ জুন থেকে আমাবস্যার জো (তিথি) শুরু হয়েছে। ২১ জুন পর্যন্ত জোয়ের মেয়াদ আছে। ডিম না ছাড়লে ২১ জুনের পর জেলেরা নদী থেকে উঠে আসতেন। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম দেখা গেল, সেভাবে লাগাতার বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল না থাকার পরও মা মাছ ডিম ছেড়ে দিল। আমরা ডিম সংগ্রহকারী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের উৎফুল্ল মনে হয়েছে। অর্থাৎ, ডিমের পরিমাণ ভালো। এবার পর্যাপ্ত ডিম পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। তিনি জানান, রাত ভর ডিম সংগ্রহের পর ভোরের মধ্যেই জেলেরা তীরে ফিরে আসেন। সংগ্রহ করা ডিম কুয়োর মধ্যে রেখে রেণু ফোটানো হবে। রেণু থেকে পোনা হবে।

এর আগে, রোববার (১৮ জুন) দুপুরে এবং গত ১৮ মে দুই দফায় কিছু (নমুনা) ডিম ছাড়ে রুই, মৃগেল, কাতলা ও কালিবাউশ- এই চার প্রজাতির প্রজনন সক্ষম মাছ, যা স্থানীয়দের ভাষায় ‘মা মাছ’। সংগ্রহকারীরা সেগুলোকে ‘নমুনা ডিম’ বলেছিলেন। চট্টগ্রামের রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার প্রায় ৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকাজুড়ে হালদা নদী। নদীর যেসব জায়গায় সাধারণত মা মাছ ডিম ছাড়ে, সেখানে প্রায় ৩০০ নৌকায় দেড় হাজার মৎস্যজীবী গত তিন মাস ধরে ডিম সংগ্রহের অপেক্ষায় ছিলেন।

প্রসঙ্গত, প্রতি বছর এপ্রিল থেকে জুন (বাংলা মাস চৈত্র থেকে আষাঢ়) কর্ণফুলী ও সাঙ্গুর মতো বিভিন্ন নদী থেকে দেশীয় কার্প জাতীয় মাছ, যেমন: রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালি বাউশ হালদা নদীতে আসে। পূর্ণিমা-অমাবস্যার তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢলের সময় তাপমাত্রা অনুকূলে থাকলে ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মা মাছ। ডিম ছাড়ার জন্য উপযুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত হতে হয়। তাপমাত্রা, পানি, প্রবল স্রোত ও বজ্রবৃষ্টি ইত্যাদি মা মাছের ডিম ছাড়ার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে। চলতি মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এপ্রিল থেকে মধ্য জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। শনিবার মানিকছড়ি ও ফটিকছড়ি উপজেলায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীদের মুখে হাসি ফোটে। রোববার রাতে ডিম ছাড়ায় আগের মতো উৎসবমূখর পরিবেশে তারা ডিম সংগ্রহ করছেন।

হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কেজি এবং ২০২১ সালে সাড়ে ৮ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ হয়েছিল। ২০২০ সালে হালদা নদীতে রেকর্ড ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৯ সালে প্রায় সাত হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে স্থানীয়রা ডিম সংগ্রহ করেছিলেন ২২ হাজার ৬৮০ কেজি। ২০১৭ সালে মাত্র ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করেছিলেন জেলেরা।

Related Articles

Back to top button