শাহ আমানত বিমান বন্দরে অগ্নি নির্বাপণ মহড়া

চট্টগ্রাম :
আগুন সহ অন্যান্য দুর্ঘটনা থেকে সুরক্ষিত রাখতে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পূর্ণাঙ্গ অগ্নি নির্বাপণ মহড়া-২০২৫ সম্পন্ন হয়েছে।
২১ জানুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে বিমানবন্দরে পূর্ণাঙ্গ অগ্নি নির্বাপণ মহড়া বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। প্রধান অতিথি হিসেবে মহড়ায় উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সচিব নাসরীন জাহান।বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া।
মহড়ায় দেখা যায়, কাল্পনিক একটি দুর্ঘটনায় নেপচুন এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট অবতরণকালে আগুন ধরে যায়। জরুরি ভিত্তিতে ছুটে আসে বিমান বন্দরের নিজস্ব ফায়ার ট্রাক ৷ মহড়ায় বেবিচক, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিস, র্যাব, এপিবিএন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল চট্টগ্রাম, বিমানবন্দর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা, এয়ার এস্ট্রা এবং নভোএয়ার সহ বিভিন্ন সংস্থা একযোগে অংশ নেয়।
কাল্পনিক দুর্ঘটনায় দেখানো হলো করণীয় কী
এই মহড়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল কোনো উড়োজাহাজে দুর্ঘটনার পর অগ্নি নির্বাপণ এবং যাত্রীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া অনুশীলন। পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার যৌথ সমন্বয় এবং তড়িৎ কার্যক্রমের মাধ্যমে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই মহড়ায় ফায়ার ক্রুদের দক্ষতা ও পেশাগত জ্ঞান বৃদ্ধি এবং সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির কার্যকারিতা যাচাই হয় যাতে কোনো ত্রুটি চিহ্নিত হলে তা দ্রুত সমাধান করে বাস্তব দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিশ্চিত করা যায়।
মোট ৬৫ জন যাত্রী ও ক্রু নিয়ে নেপচুন এয়ারলাইন্সের একটি মাঝারি আকারের উড়োজাহাজ ‘এয়ার বাস-৩২০’, যার কলসাইন নেপচুন ৪০৬, শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের রানওয়ে-২৩ এর পূর্ব দিক থেকে অবতরণ করে। অবতরণের পর পরই বিমানটি অপ্রত্যাশিতভাবে রানওয়ে থেকে সরে ট্যাক্সিওয়ে ব্রাভোর ২০০ ফুট দূরে কার্গো অ্যাপ্রোনের সামনে গিয়ে ছিটকে পড়ে। উড়োজাহাজের ডান পাশের ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তের মধ্যে কন্ট্রোল টাওয়ার বিষয়টি অবলোকন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ক্রাস এলার্ম সুইচ অন করার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের অবগত করে। সেইসাথে কন্ট্রোল টাওয়ার বিমান বন্দরের ফায়ার স্টেশন, বিমান বন্দর পরিচালক, স্যাটো, সহকারী পরিচালককে (ফায়ার) তাৎক্ষণিক ভাবে অবগত করে। ইতোমধ্যে উড়োজাহাজের নিচের অংশ দিয়ে আগুন দেখা দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটিতে পুরোপুরি আগুন ধরে যায়। সর্বশেষ, ৪০ জন যাত্রীকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়, ২১ জন আহত হয় এবং ৪ জন মারা যায়।
প্রধান অতিথি বলেন, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইকাও) নির্দেশিকা অনুযায়ী, বিমানবন্দরে কর্মরত ফায়ার ক্রুদের দক্ষতা ও পেশাগত জ্ঞান উন্নত করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রপাতিগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগের সময় কার্যকরভাবে ব্যবহারের উপযোগিতা যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এতে আমাদের আত্মবিশ্বাস জোগায় যে, যেকোনো অনভিপ্রেত পরিস্থিতি সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারব।
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে নিয়মিত এমন মহড়া আয়োজন করা হয়। এই ধরনের মহড়া জরুরি মুহূর্তে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা বিমানের অগ্নি নির্বাপণ ও যাত্রী উদ্ধার তৎপরতায় প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা অর্জন করছি। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া সহ কয়েকটি দেশে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই মহড়ার মাধ্যমে আমাদের প্রস্তুতিকে আরও শাণিত করার সুযোগ পাচ্ছি। যে কোনো অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুত থাকতে হবে।
মহড়া প্রত্যক্ষ করেন বেবিচক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সহ মহড়ায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।