Breakingপার্বত্য অঞ্চলবান্দরবানশীর্ষ সংবাদসারাদেশ

লামায় লুকোচুরিতে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর পাথর নিলাম

চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক, লামা ,বান্দরবান : পার্বত্য বান্দরবানের লামার ফাঁসিয়াখালীর বনপুর ও আলীকদমের আবাসিক এলাকা নামক স্থানে অবৈধভাবে আহরিত আড়াই লক্ষাধিক ঘনফুট পাথর গোপনে সিন্ডিকেটের নিকট বিক্রি করে দিয়েছেন খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহা-পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. নুরুন্নবী। এই ঘটনায় চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে স্থানীয় জেলা এবং উপজেলা প্রশাসন।

স্থানীয় প্রশাসনের অভিযোগ, জব্দকৃত পাথর প্রকৃত পরিমান গোপন করা হয়েছে কথিত এই নিলাম কার্যক্রমে। বিধি মোতাবেক নিলামের বিষয়টিও জানানো হয়নি স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীদেরকে। যার কারণে বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার।

যদিও খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহা-পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. নুরুন্নবী এই নিলাম কার্যক্রম পরিচালনাকে ভুল বোঝাবুঝি বলে দাবি করছেন। তিনি বলেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি লামার ফাঁসিয়া খালী ইউনিয়নের চারটি জায়গায় ১ লক্ষ ১৬ হাজার ২০০ শত ঘনফুট পাথর নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। তবে অভিযোগ উঠায় পাশ্ববর্তী আলী কদম উপজেলার ৪৫ হাজার ঘনফুট পাথরের নিলাম কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছর ৭ মার্চ লামার ফাঁসিয়া খালী ইউনিয়নের ৫টি জায়গা থেকে ২ লক্ষ ১৭ হাজার ৫ শত ঘনফুট পাথর জব্দ করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (১১ বিজিবি)। এর মধ্যে বড় মার্মা পাড়ায় ৬৯ হাজার, ওয়াক্রা পাড়ায় ১ লক্ষ, রামগতি পাড়ায় ২৩ হাজার ৫ শত, কড়ইতলী ১৫ হাজার এবং গয়াল মারায় ১০ হাজার ঘন ফুট পাথর জব্দ করা হয়। একই ভাবে পাশ আববর্তী আলী কদমের আবাসিক এলাকায় ৪৫ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে। কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী এসব পাথর পাহাড় কেটে এবং ঝিরি খনন করে অবৈধ ভাবে উত্তোলন পূর্বক পাচারের জন্য সেখানে জমা করে। যার আনুমানিক মূল্য ৩ কোটি ৮০ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা বলে বিজিবি সূত্র জানিয়েছে। জব্দকৃত পাথরের মামলা বিধি মোতাবেক নিষ্পত্তি করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে গত বছর ০৮ মার্চ বান্দরবান জেলা প্রশাসককে লিখিত পত্র পাঠায় বিজিবি নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়ন’র উপ-পরিচালক মু. জাহিদুল ইসলাম ভূঁঞা। পরে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ২৮ সেপ্টেম্বর এক পত্র মূলে এসব পাথর নিলামে বিক্রয় করার জন্য লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দায়িত্ব দেন।

লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার আপ্রুছিং মার্মা ও সাংগু মৌজার হেডম্যান চংপাত ¤্রাে জানান, খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর এক কর্মকর্তা গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বনপুর এলাকায় গিয়ে একটি সিন্ডিকেটের কাছে পাথরগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন। একই দিন বিকালে আলীকদমে গিয়ে সেখানকার ৪৫ হাজার ঘনফুট পাথরও সমঝোতার মাধ্যমে কথিত নিলাম প্রদান করেন। তবে জব্দকৃত পাথরের পরিমাণ কম দেখানো, স্থানীয় ব্যবসায়িরা না জানা এবং প্রতিযোগিতামূলক নিলাম না হওয়ার কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তফা জাবেদ কায়সার জানান, খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর পরিচালক ফাঁসিয়া খালীর বনপুর এলাকায় পরিদর্শন কালে তাকে বিধি মোতাবেক প্রটোকল দেওয়া হয়েছে। তবে পাথর নিলামের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবগত না করেই সম্পন্ন করে। পরে বিষয়টি জেনে বান্দরবান জেলা প্রশাসক এর নির্দেশে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর বিতর্কিত এই নিলাম কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে।

Related Articles

Back to top button