স্টাফ রিপোর্টার ,নারায়ণগঞ্জ :
নারায়ণগঞ্জের বন্দরের লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে সোমবার বিকেল থেকে শুরু হয়েছে দুইদিন ব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহা অষ্টমী পূণ্য স্নানোৎসব। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত স্নানোৎসব শেষ হয়েছে। স্নান উপলক্ষে তিনস্তরের কঠোর নিরাপত্তা গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ। তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। স্মানোৎসবকে ঘিরে নিরাপত্তায় পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশসহ দেড় হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে বলে জানান নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ- সার্কেল) শেখ বিল্লাল হোসেন।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে লাঙ্গলবন্দের ব্রহ্মপুত্র নদে মায়ের সাথে স্নান করতে নেমে পানিতে ডুবে রাজদ্বীপ নামে ৯ বছরে এক শিশুর মৃত্যু ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রাজদ্বীপকে উদ্ধার করে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। নিহত রাজদ্বীপ চট্টগ্রামের পটিয়ার এলাকার উজ্জ্বল দাসের ছেলে।
বন্দর নৌ পুলিশের পরিদর্শক হাবিবুল্লাহ জানান, শিশু রাজদ্বীপ মঙ্গলবার দুপুরে মা প্রিয়াঙ্কা দাস, খালা ও নানির সাথে রাজঘাট এলাকায় পুণ্য স্নান করতে নামে। এ সময় রাজদ্বীপ মায়ের হাতছাড়া হয়ে গেলে পানির নিচে তলিয়ে যায়। ছেলেকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা কান্নাকাটি শুরু করলে নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক থাকে মৃত ঘোষণা করে।
লাঙ্গলবন্দের স্নান উৎসব উদযাপন কমিটির সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেল ৪ টা-২০ মিনিটে স্মানোৎসবের লগ্ন শুরু হয়। চলে মঙ্গলবার ৪টা ৫৫ মিনিটে। স্নানের লগ্ন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্নানোৎবে মেতে উঠেছে দেশ-বিদেশ থেকে আসা পূণ্যার্থীরা। আয়োজকরা জানায়, মন্ত্র পাঠ করে ফুল, বেলপাতা, ধান, দূর্বা, হরীতকী, ডাব, আম্রপল্লব, নিয়ে পূণ্যার্থীরা স্নানে অংশ নেন । লগ্ন শুরুর পরপরই পূণ্যার্থীর ঢল নামে লাঙ্গলবন্দের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত চলবে ¯স্নানোৎসব। পাপ মোচনের আশায় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পূণ্যার্থীদের পদচারণে মুখরিত হয়ে উঠেছে লাঙ্গল বন্দ এলাকাটি।
লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি সরোজ সাহা জানান, স্নানোৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রাপ্ত ছাড়াও ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পূণ্যার্থীরা আসছেন। আমরা আশা করছি, এবার ১০ থেকে ১২ লাখ পুণ্যার্থী স্নানোৎসবে অংশ নেন। নারীদের কাপড় বদলানোর জায়গা ও বিশুদ্ধ খাওয়ার পানিসহ বিভিন্ন ধরণের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের ১৯টি ঘাটের মাধ্যমে পুণ্যার্থীরা ¯স্মনোৎসব সম্পন্ন করছেন।
আয়োজকরা জানান, নলিত মোহন সাধু ঘাট, অন্নপূর্ণা ঘাট, রাজঘাট, মাকরী সাধু ঘাট, গান্ধী (শ্মশান) ঘাট, ভদ্রেশ্বরী কালী ঘাট, জয়কালী মন্দির ঘাট, রাজঘাট, রক্ষাকালী মন্দির ঘাট, পাষাণ কালী মন্দির ঘাট, প্রেমতলা ঘাট, মণি ঋষিপাড়া ঘাট, ব্রহ্ম মন্দির ঘাট, দক্ষিণেশ্বরী ঘাট, পঞ্চপান্ডব ঘাট ও পরেশ মহাত্মা আশ্রম ঘাটসহ ১৯টি ঘাটের মাধ্যমে পূণ্য স্নানোৎসব চলছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-সার্কেল) শেখ বিল্লাল হোসেন বলেন, সোমবার বিকেল ৪ টা-২০ মিনিটে স্নানোৎসব শুরু হয়েছে। স্নানোৎসবকে ঘিরে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পোশাকে পুলিশ, ডিবি ও সাদা পোশাকে পুলিশ সহ প্রায় দেড় হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ৫০টির অধিক সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ৭টি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে জেলার ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদে নৌ-পুলিশ কাজ করছে। স্নানোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।