রামগড় স্থলবন্দর অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি
ফ্যাক্ট : নকশা অনুমোদন ও ভূমি জটিলতা
চেঙ্গী দর্পন,স্টাফ রিপোর্টার, খাগড়াছড়ি : নকশা অনুমোদন ও ভূমি জটিলতা পুরোদমে শুরু করা যাচ্ছেনা খাগড়াছড়ির রামগড় স্থলবন্দরের নির্মাণ কাজ। ২০১৭ সালে প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে এই স্থলবন্দর নির্মাণের অনুমোদন দেয় সরকার। অনুমোদনের পাঁচ বছর পরে এসে দ্রুত কাজ শেষ করার আশ্বাস দিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ির রামগড় ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম সীমান্তের ফেনী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ সহ নানা লক্ষ্যকে সামনে রেখে মৈত্রী সেতুর বাংলাদেশ অংশে প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করার কথা রামগড় স্থলবন্দর। সরকার এর অনুমোদন দিয়েছে ২০১৭ সালে। এরপর স্থল বন্দরের জন্য প্রায় ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৬ একর জায়গা অধিগ্রহণ করেছে। কিন্তু এখনও কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ বন্দর নির্মাণের কাজ।
রামগড় পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম কামাল বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য সহ সম্পর্ক সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ অংশে রামগড় স্থল বন্দরের জন্য ২৬ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে এই বন্দরের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। করোনা মহামারি, ভূমি জটিলতা ও দুই দেশের সীমান্তবর্তী জায়গায় স্থলবন্দরের নির্মাণকাজ হওয়াতে বন্দরের নকশা অনুমোদনের জন্য দুই দেশের মধ্যে দফায় দফায় বিজিবি, বিএসএফ পর্যায়ের পতাকা বৈঠক করতে হচ্ছে। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এখনও পর্যন্ত বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ ।
রামগড় উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কার্বারী বলেন, ‘রামগড় সহ পুরো দেশ এই বন্দরের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছে। সবাই আশা করে বন্দরের কাজ শেষ হলে বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও আত্মিক সম্পর্ক বাড়বে। কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং যোগাযোগ সুবিধা পাবে বাংলাদেশ ও ভারত।’
বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রকল্প-১ এর প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) সারোয়ার আলম জানিয়েছেন, প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে রামগড় স্থলবন্দর নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। বন্দরটিতে চার তলা পাসেঞ্জার টার্মিনাল ও পোর্ট ভবন নিমার্ণসহ নানা অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। মোট দুই পর্যায়ে শেষ হবে বন্দরের কাজ। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করেছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের ভূমি উন্নয়ন সহ সব অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করা হবে।
রামগড় ৪৩ বিজিবির জোন কমান্ডার (সিও) ল্যাফট্যানেন্ট কর্নেল মো. আনোয়ারুল মাজহার বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনও দেশের আন্তর্জাতিক সীমানার দেড়শ’ গজের মধ্যে কোনও স্থাপনা করতে হলে, সেই স্থাপনার নকশায় অবশ্যই দুই দেশের সীমান্ত বাহিনীর অনুমোদন নিতে হয়। ২০১৭ সালে সরকার রামগড় স্থল বন্দরের অনুমোদন দিয়েছে। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) দিয়ে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) কাছ থেকে নকশার অনুমোদন নেয়নি। ফলে স্থল বন্দর ঘোষণার পাঁচ বছর পরেও শুরু হয়নি এর নির্মাণ কাজ। নকশা অনুমোদন হলে কাজ শুরু হতে দেরি হবে না।’
নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রামগড় স্থলবন্দরের জন্য অধিগ্রহণকৃত এলাকা, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ। দুই দেশ সব ক্ষেত্রে পরস্পরের উন্নয়ন ও শান্তির জন্য কাজ করছে। সবকিছু ঠিক হওয়ার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রামগড় স্থলবন্দরের কাজ শেষ হলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং অর্থনৈতিকভাবে খাগড়াছড়ি সহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের ব্যবসা বাণিজ্যে নতুন দ্বার উন্মোচন হবে।