Breakingখাগড়াছড়িজাতীয়পার্বত্য অঞ্চলশীর্ষ সংবাদসারাদেশ

রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ

আজ বিজিবি দিবস

চেঙ্গী দর্পন ,স্টাফ রিপোর্টার , খাগড়াছড়ি : পাশাপাশি চারটি পিলারে চারটি স্তরে উপরে বর্ণমালা নিচে সংখ্যায় সাজানো বামদিক থেকে প্রথমটিতে ‘রা ১’, দ্বিতীয়টিতে ‘ম ৭’, তৃতীয়টিতে ‘গ ৯’, চতুর্থটিতে ‘ড় ৫’। এগুলোকে একত্রে মিলিয়ে পড়লে হয় রামগড়-১৭৯৫। রামগড় হচ্ছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার একটি উপজেলা আর ১৭৯৫ সংখ্যাটি হচ্ছে ইংরেজি বছর। এই স্থাপনাটি কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে বিজিবির জন্মস্থান রামগড়ে।

খাগড়াছড়ির পার্বত্য জেলা সদর থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পচিমাঞ্চলের ভারত সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর শান্তজলের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা প্রাচীন মহকুমা শহর রামগড় উপজেলা এর প্রশাসন সংলগ্ন এলাকায় এলেই দেখা মিলবে চার অঙ্কিত বর্ণ ও সংখ্যাকে ঘিরে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের একটি বাহীনির সুদীর্ঘ ইতিহাস। জানা যাবে বাংলাদেশের সীমান্ত বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জন্ম ইতিহাস।

জানা যায়, ১৭৯৫ সালের ২৯ জুন ৪৪৮ জন সৈন্য সংখ্যা নিয়ে এই বাহিনীর সৃষ্টি হয়। ৬ রাউন্ড গোলা, ৪টি কামান ও ২টি অনিয়মিত অশ্বারোহী দল নিয়ে রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন নামে রামগড় থেকেই বাহিনীটির যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ১৮৬১ সালে পূর্বাঞ্চলের নিয়মিত ও অনিয়মিত পুলিশ বাহিনীর সমন্বয়ে রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়নকে নতুনভাবে ফ্রন্টিয়ার গার্ডস নামে পুনর্গঠন করা হয়। যার সদস্য সংখ্যা ১,৪৫৮ জনে উত্তীর্ণ করে চট্টগ্রামে সদর দপ্তর স্থাপন করা হয়। ১৮৭৯ সালে স্পেশাল রিজার্ভ কোম্পানি নামে এ বাহিনী তৎকালীন সদস্যদের নিয়ে পিলখানায় প্রথম ঘাঁটি স্থাপন করা হয়। এ পর্যন্ত পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কর্মকান্ড পরিচালিত হয়ে আসছে। ১৮৯১ সালে বাহিনীর নতুন নামকরণ করা হয় বেঙ্গল মিলিটারি পুলিশ। ঢাকা, খুলনা, ভাগলপুর ও গ্যাংটকে ৪টি ব্যাটালিয়নে ভাগ করে কোম্পানিগুলোকে স্থানান্তর করে একজন ইউরোপীয় সুবেদারের অধীনস্থ করা হয়। ১৯২০ সালে কালের বির্বতনে বেঙ্গল মিলিটারি পুলিশকে ইন্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইয়েলস নামে পুনঃনামকরণ করে ১৬ প্লাটুনে বিভক্ত করে সীমান্ত ও অভ্যান্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত করা হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তের পর এ বাহিনীর নামকরণ করা হয় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)। কলকাতা মেট্রোপলিটন আর্মড পুলিশের একটি দল পরবর্তী সময়ে আরো তিন হাজার বাঙালিকে নিয়োগ করে এ বাহিনীকে পুনর্গঠিত করে দক্ষ নেতৃত্ব এবং দিকনির্দেশনার প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী থেকে অফিসার নিয়োগ করা হয়। ১৯৫৮ সালে এ বাহিনীকে প্রদান করা হয় চোরাচালান দমনের দায়িত্বে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য এ বাহিনীর ১৪২ জন সদস্য জাতীয় বীরত্বপূর্ণ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন যার মধ্য মরণোত্তর বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হয়েছিলেন ৯ জন, বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত হয়েছিলেন ৪০ জন এবং বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হয়েছিলেন ৯১ জন। দেশ স্বাধীনের পর নতুন আইন সংশোধন এর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের ৩ মার্চ ইপিআর এর পোশাক পরিবর্তনসহ নতুন নামকরণ করা হয় বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)। সর্বশেষ গত ২৩ জানুয়ারি ২০১১ সালে বাহিনীটির নাম ও পোশাক পরিবর্তন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) পতাকা উত্তোলন করেন।

২০০৫ সালের ৬ জুন রামগড় ৩৩ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের উদ্যোগে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এনডিসসি. পিএসসি রামগড়ের অফিসটিলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দৃষ্টিনন্দন ‘রাইফেলস স্মৃতিস্তম্ভ’ উদ্বোধন করেন। কালের বিবর্তনে এখানে স্থাপন করা হয় বাহিনীটির প্রতিকায়নের ইতিহাস, বাহিনীটির বিবর্তনে পোড়ামাটির তৈরি ৮টি প্রতীকী অবয়ব। পশ্চিম পাশে সীমান্ত পিলারের অনুকরণে ৪টি আর সিসি পিলার স্থাপন করা হয় যাতে রামগড় ১৭৯৫ অলংকিত করা হয়েছে এবং স্মৃতিস্তম্ভর মাঝখানে ধাতব পদার্থ স্থাপন করা হয় যাতে সৈনিকদের রাইফেলসের প্রতীকী ছবি প্রদর্শন করা হয়েছে।

তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট রামগড়বাসীর দাবী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জোয়ানদের আরো শক্তিশালী করার লক্ষে রামগড়ে রিক্রটিং (লোকভর্তি) কেন্দ্র এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর জাদুঘর স্থাপন মধ্য দিয়ে বাহিনীটির সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দেশ মাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে আরো উজ্জল ভূমিকা রাখবে বলে সচেতন মহল মনে করেন।

Related Articles

Back to top button