চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক, শিবালয়, মানিকগঞ্জ :সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব বিদ্যা প্রদানকারী দেবী সরস্বতী পূজা ঘিরে প্রতিমা তৈরির ধুম পড়েছে শিবালয়ে।
আগামী শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারী) অনুষ্ঠিত হবে এ পূজা। এই পুজাকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার প্রতিমা তৈরির কারিগররা। ইতোমধ্যে কাঠামো ও মাটির কাজ শেষে হয়েছে অনেক মন্দিরে। এবার শুরু হয়েছে রঙ তুলির ছোঁয়ায় প্রতিমার শুভ্র বসন পরিধানের মাধ্যমে অঙ্গ জ্যোতি ফুটিয়ে তোলার মূল কাজ।
উপজেলার শিবালয় দুর্গা মন্দির, টেপড়া কালীবাড়ি মন্দির, আমডালা পূজা মন্দির, উথলী সার্বজনীন মন্দির, বরংগাইল, মহাদেপুর, শিমুলিয়া, জাফরগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমা শিল্পীরা মনের মাধুরী মিশিয়ে তাদের কল্পনায় সরস্বতী দেবীকে অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
সনাতন ধর্মের অনুসারি শিক্ষার্থীরা বিদ্যা দেবীর আশীর্বাদ লাভের আশায় প্রতিবছর লোকনাথ পঞ্জিকা অনুসারে মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা করে থাকেন। এই পূজা উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে বাড়িতে নির্মাণ করা হয়েছে অস্থায়ী মন্দির। এ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্লাব ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এ পূজা উদ্যাপনের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা। তাই উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও পালপাড়ায় সরস্বতী প্রতিমার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। করোনা পরিস্থিতিতে যেন স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত না হয় সে ব্যাপারে প্রস্তুতি নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরাও।
মহাদেবপুর পালপাড়ায় গিয়ে কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ বছর এখানে ৭০ টি প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। যা সর্বনিম্ন দেড় হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হবে। তাই ২ জন সহযোগীকে নিয়ে সকাল থেকে মাঝরাত পর্যন্ত প্রতিমা তৈরি ও রং করায় তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বরংগাইল পাল পাড়ার মৃৎশিল্পী দুলাল পাল ও কেশব পালের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, চলছে ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের প্রতিমা তৈরির কাজ। মৃৎশিল্পীরা দিন-রাত পরিশ্রম করে চলেছেন। এ কাজে বাড়ির গৃহবধূরাও সহায়তা করেছেন। মৃৎশিল্পী দুলাল পাল বলেন, প্রতীমা তৈরি ও সাজসজ্জায় যে জিনিসগুলো ব্যবহার করা হয়, তার দাম বর্তমান বাজারে অনেক বেশি। ফলে প্রতীমা তৈরির খরচ অনেকটাই বেড়েছে। যারা আগে থেকে বায়না করেছেন, তাঁরা অতিরিক্ত দাম দিতে রাজি নন।
পূজার বিষয়ে মিরপুর বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী দেবজ্যোতি রায় বিশাল বলেন, প্রতিবছরই বিদ্যার জন্য দেবীর কাছে প্রার্থনা করি। এবারও দেবীর কাছে বিদ্যা, দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনা করব। কিন্তু করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মায়ের চরণে পুষ্পাঞ্জলী দিতে পারবো কিনা জানি না।
শিবালয় পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রথীন সাহা বলেন, ৫ ফেব্রুয়ারি সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলা সদর ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বাসাবাড়িতে সরস্বতী পূজা উদ্যাপিত হবে। আশা করছি, কোনো ধরনের বঁাধাবিপত্তি ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে জঁাকজমক পরিবেশে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা সম্পন্ন হবে।