Breakingশীর্ষ সংবাদসারাদেশ

দাউদকান্দির বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্বের উদ্বোধন

চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক ,দাউদকান্দি(কুমিল্লা) : কুমিল্লার দাউদকান্দিতে বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্বের উদ্বোধন করলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অবঃ) সুবিদ আলী ভূইয়া এমপি।

মঙ্গলবার(১৪ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় শহীদদের স্মরনে পুস্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তিনি উদ্বোধন করেন। পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের পর শহীদদের স্মরণে এক মিনিটি নীরবতা পালন, মোমবাতি প্রজ্জলন ও তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে সুবিদ আলী ভূইয়া বলেন, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বাঙালি জাতির বেদনাবিধুর দিন। এই দিনে রায়পুর বধ্যভূমিতে শহীদদের আমরা শ্রদ্ধা জানানোর জন্য স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন করছি। এটি ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন হয়ে থাকবে। রাজাকার-আলবদরবাহিনীর উত্তরসূরীরা এখনও সক্রিয়। দেশের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাদেরকে শেকড় থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। স্বাধীন দেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের কোনও স্থান হবে না।

এরপর বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণিপেশার মানুষ শহীদদের স্মরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেজর(অবঃ) মোহাম্মদ আলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুল ইসলাম খান, সহকারী কমিশনার ভূমি সুকান্ত সাহা, উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আহসান হাবীব চৌধুরী লিল মিয়া, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খোরশেদ আলম, ভাইস চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম নয়ন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোজিনা আক্তার, দাউদকান্দি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন হাজারী, সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, জিংলাতুলি ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন, উপজেলা মৎস্যলীগ সভাপতি ও ইলিয়টগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন, যুবলীগ সভাপতি আক্তার হোসেন মুন্না প্রমূখ। স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধরা। তারা বলেন, রায়পুর বধ্যভূমি সংরক্ষণের জন্য আমরা অনেক কথা বলেছি। কিন্তু আগের কোনও সরকার সেগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়নি। উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর(অবঃ) মোহাম্মদ আলী উদ্যোগ নিয়ে কাজটি করেছে। এ জন্য আমরা খুশি।

জানা গেছে, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার জিংলাতুলি ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের মাঝামাঝি স্থানে খালের উপর রয়েছে রায়পুর সেতু। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে কাঠের পুল ছিল এটি। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা বিভিন্ন গ্রাম থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিবাহিনীর সহযোগী সন্দেহে নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে কাঠের পুলের উপর এনে গুলি করে হত্যার পর লাশ খালের পানিতে ফেলে দিত। আবার অনেককে হত্যার পর পুলের দক্ষিণ পাশে গর্ত করে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে বলেও জানান স্থানীয় প্রবীনরা। এতদিন সেখানে ছিল না কোনও স্মৃতিসৌধ। তবে এবার সেখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ।

দীর্ঘদিন অরক্ষিত বধ্যভূমিটি স্মৃতিস্তম্ভতে রূপ নেয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আনন্দ ফিরে এসেছে। ১৯৭১ সালের ২৩শে মে রবিবার সংঘটিত গণহত্যায় রায়পুর গ্রামের যারা শহীদ হয়েছিলেন তারা হলেন, রায়পুর গ্রামের রাম মানিক্য দেবনাথের ছেলে শহিদ ডা. পা-ব দেবনাথ, বলরাম সরকারের ছেলে শহিদ শীতল চন্দ্র সরকার, কেবলা সাহার ছেলে শহিদ পা-ব সাহা, পা-ব সাহার স্ত্রী বিদেশিনি শাহা, রাজা রাম সরকারের ছেলে শহিদ ফেলান সরকার, জয় চন্দ্র সরকারের ছেলে শহিদ শরৎ চন্দ্র সরকার, লাল মোহন বণিকের ছেলে শহিদ সুধীর বণিক, নরেন্দ্র দেবনাথের স্ত্রী শহিদ কামিনী সুন্দরী দেবনাথ, রমেশ চন্দ্র সরকারের ছেলে শহিদ উমেশ সরকার, রাম দয়াল দেবনাথের ছেলে শহিদ অনাথ দেবনাথ এছাড়া আদমপুর গ্রামের শহিদ অনুকূল সরকার এবং বরুড়া উপজেলার রামমোহন গ্রামের শহিদ নুরু মিয়া।

স্বাধীনতার পরে রায়পুর বধ্যভূমিতে গণহত্যার কোন স্মৃতি সংরক্ষণ করা হয়নি। দীর্ঘদিন বধ্যভূমিটি অবহেলিত ছিলো। এখন বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন অরক্ষিত থাকা বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানের উদ্যোগ নেওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে আনন্দ ফিরেছে। বর্তমানে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ নির্মাণাধীন এ স্মৃতিস্তম্ভ দেখতে আসছেন।

Related Articles

Back to top button