Breakingজাতীয়শীর্ষ সংবাদসারাদেশ

জাবিতে সাংবাদিক নির্যাতনের বিচারের দাবিতে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি :
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কর্মরত এক সাংবাদিককে নির্যাতনের বিচার চেয়ে চার দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক বৃন্দ।

শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর ২০২২) বেলা সাড়ে ৩ টায় শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে ঢাকা পোস্টের প্রতিনিধি আলকামা আজাদের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি বেলাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে ভুক্তভোগীর কোনো বক্তব্য সংযুক্ত করা হয়নি, অভিযুক্ত অভিযোগ বিষয়ে কোনো তথ্য উঠে আসেনি, অভিযুক্তদের বক্তব্য বিস্তারিত উঠে এসেছি কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য সংকোচ করা হয়েছে। সাংবদিক নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরপেক্ষ তদন্ত করেনি।’

অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সামি আল জাহিদ প্রীতম বলেন, ‘হলগুলো প্রশাসন চালায় না, চালায় ছাত্রলীগ। প্রশাসন শুধু দাপ্তরিক কাজগুলো কোনমতে করছে। হলের আসন দখলে রেখে ছাত্রলীগ আসন সংকট সৃষ্টি করেছে। আজকের এই মানববন্ধন থেকে আমার দলের পক্ষে আমি বলতে চাই, অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টের ধারা অনুযায়ী সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।’

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি রাকিবুল হক রনি বলেন, ‘যখন সাংবাদিককে গেস্টরুমে পেটানো হয় তখন হল প্রশাসন কোথায় ছিলো। আসলে হল প্রশাসন ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের লেজুড়বৃত্তি করে। পাঁচ দিনের মধ্যে নির্যাতনের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আজ একটা মাস পার হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারে নি। আসলে তদন্ত কর্মকর্তারা সাংবাদিকের দোষ খোজার চেষ্টা করেছেন।আজকে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একে অপরের পরিপূরক হয়ে দাড়িয়েছে। একজনের দোষ আরেকজন ঢাকার চেষ্টা করে। আমরা সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার শাস্তির দাবি জানায়।’

মানববন্ধনে ছাত্র অধিকার পরিষদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের নেতা জহির ফয়সাল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চামড়া গন্ডারের মতো হয়ে গেছে। লজ্জার সাথে বলতে হয় এই প্রশাসনের গাফলতির জন্যই জাতির বিবেক সাংবাদিকদের ও মানববন্ধন করতে হয় সুষ্ঠ বিচারের জন্য। প্রশাসন বলেছে, গণরুম সংস্কৃতি রোধে জিরো টলারেন্স কিন্তু কোনো হল প্রশাসন এই ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ-ই করছে না। হলের সিট বন্টনে প্রশাসন কোনো ভূমিকা পালন করে না। হলের সিট লিস্ট করা, বন্টন করার ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন পূর্ণভাবে হস্তক্ষেপ করে। এই অথর্ব প্রশাসন যদি তাদের দায়িত্ব পালন করতে না ই পারে তাহলে তাদের উচিৎ পদত্যাগ করা।’

এছাড়াও মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ছাত্র ফ্রন্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায়, কালের কণ্ঠের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শুভ আনোয়ার, জাবিসাস যুগ্মসাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।

মানববন্ধনে চার দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলো হলো; ২৪ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্তদের বিচার নিশ্চিত করা, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল প্রশাসনের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ আচরণ না করায় তদন্ত কমিটির গাফিলতি খতিয়ে দেখা এবং আবাসিক হল সমূহের নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনের হাতে নেওয়া। এদিকে দাবি মেনে নেওয়া না হলে আগামী রবিবার নতুন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করা হবে বলে ঘোষণা দেন সাংবাদিকরা।

উল্লেখ্য গত ২ আগস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে কর্মরত এক গণমাধ্যমকর্মীকে ‘গেস্ট রুমে’ ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরবর্তীতে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে হলটির ৮ ছাত্রলীগ নেতাকে সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে ‘অবাঞ্ছিত’ করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা।

অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ তম ব্যাচের নৃবিজ্ঞান বিভাগের আসাদ হক ও আরিফ জামান সেজান, ৪৭ তম ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের জিয়াদ মির্জা, দর্শন বিভাগের হাসিবুল হাসান রিশাদ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের রাইহান বিন হাবিব, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মুনতাসির আহমেদ তাহরীম, আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ্ এবং ৪৮ তম ব্যাচের রসায়ন বিভাগের জাহিদ হাসান।


বে দীর্ঘ সময় পার হলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

Related Articles

Back to top button