চেঙ্গী নদীতে ফুল ভাসানো ও পূজার মধ্যে দিয়ে পানছড়িতে বৈসাবি উৎসব শুরু
![](https://chengidarpon.com/wp-content/uploads/2024/04/Biju-pan-1-780x470.jpg)
চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক, পানছড়ি, খাগড়াছড়ি :
পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সপ্তাহ দিনব্যাপী বৈসাবি উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। জেলার পানছড়ির রাবার ডাম ও লোগাং বড় ব্রীজ সংলগ্ন চেঙ্গী নদীতে ফুল পূঁজা ও ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে চাকমাদের বিজু , ত্রিপুরা দের বৈসুক ও মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব।
১২এপ্রিল ২০২৪ ,শুক্রবার সকালে রাবার ডাম শান্তিপুর সার্বজনীন ফুল বিঝুর উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রিয় ময় চাকমা ও সদস্য সচিব গীতায়ন চাকমার নেতৃত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপজেলা প্যানেল চেয়ারম্যান চন্দ্র দেব চাকমা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মনিতা ত্রিপুরা, ইউপি চেয়ারম্যান (পানছড়ি সদর) উচিত মনি চাকমা, সাবেক চেয়ারম্যান ( উল্টাছড়ি) সুব্রত চাকমা, পানছড়ি সরকারী কলেজের প্রভাষক পরেশ চাকমা, ইউপি সদস্য বিনয় বিকাশ চাকমা সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে লোগাং বড় ব্রীজ সংলগ্ন চেঙ্গী নদীর ঘাটে লোগাং ইউপি চেয়ারম্যান জয় কুমার চাকমা ও চেঙ্গী ইউপি চেয়ারম্যান আনন্দজয় চাকমার উদ্যোগে ভোরে গ্রামের তরুণ তরুণীরা ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে তিন দিন উৎসবের সূচনা করেন।
ফুল বিঝু,হারি বৈসুর দিন ভোর থেকে বাড়ির পাশের নদী ও খালে গিয়ে প্রার্থনারত হয়ে পুরাতন বছরকে বিদায় জানায় ত্রিপুরা ও চাকমা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন বয়সী নর-নারী। তবে এখন ফুল বিঝু শুধুমাত্র চাকমা সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ নেই। মারমা ও স্থানীয় বাঙালীরাও অংশ নিচ্ছেন ফুলবিঝু ও হারি বৈসুতে। ফুল নিবেদন শেষে তরুণ তরুণীরা মেতে ওঠেন আনন্দ উৎসবে। নদীর ধারে মনোঘরে চলে গান নৃত্য ও আনন্দ উৎসব । একই সাথে মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা কিশোর -কিশোরী, যুবক -যুবতীরা পানি খেলায় অংশ নেয়। নদীতে স্নান শেষে বাড়ি গিয়ে বায়োজ্যেষ্ঠদের প্রণাম করে ছোটরা। ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সাজসজ্জা শেষে প্রস্তুতি চলে অতিথি অ্যাপায়নের। ত্রিপুরা ও চাকমা সম্প্রদায়ের চলছে বিভিন্ন গ্রামীণ খেলাধুলাও।
পানছড়ি উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান অলি জানান,পার্বত্য অঞ্চলের সামাজিক উৎসব বৈসাবি যেন সকল সম্প্রদায়ের উৎসব। ফুল ভাসাতে দেখতে এসে এখানে মনে হচ্ছে না আমরা বাঙ্গালী। আমাদের মনে হচ্ছে আমরাও এদের একজন।
বিঝু, বৈসু, সাংগ্রাইং-২০২৪ উদযাপনে রাবার ডাম শান্তিপুর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি চন্দ্র দেব চাকমা বলেন, খাগড়াছড়ি সহ তিন পার্বত্য জেলায় এবছর উৎসবের উচ্ছ্বাস বয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলের সকল সম্প্রদায়ের প্রাণের উৎসব বৈসাবি উৎসব। পার্বত্য অঞ্চলের মুসলমানদের পবিত্র ঈদ উল ফিতর, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর বৈসাবী উৎসব ও বাঙ্গালীদের বাংলা নববর্ষকে ঘিরে পাহাড়ের প্রতিটি ঘরে ঘরে আনন্দ বয়ে যাচ্ছে।এই ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়েই শুরু হচ্ছে পাহাড়ি জন গোষ্ঠীগুলোর তিন দিনব্যাপী প্রধান সামাজিক উৎসব। এই উৎসবের মধ্যেমে পার্বত্য অঞ্চলে সকল সম্প্রদায়ের মাঝে সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় হবে। পৃথিবী থেকে সকল হানাহানি, দুঃখ, গ্লানি, মারামারি, হিংসা দুর হবে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি। পার্বত্য অঞ্চলের সকল সম্প্রদায় যাতে এক হয়ে সন্দুর একটি আগামীর বাংলাদেশ গড়তে পারে সেই দিকে আমাদের সকলের প্রত্যাশা থাকবে।