চট্টগ্রাম – কক্সবাজারে রেল চলবে ১২ নভেম্বর ; উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
চট্টগ্রাম :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১২ নভেম্বর ২০২৩ আনুষ্ঠানিকভাবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের উদ্বোধন করবেন জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন । নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। আগামী ২ নভেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে এই রুটে পূর্ণাঙ্গ একটি ট্রেন চালানো হবে। আগামী ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের উদ্বোধন করবেন।
১৬ অক্টোবর ২০২৩ সোমবার সকালে রেলমন্ত্রী চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
রেলমন্ত্রী চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর রেলসেতুর সংস্কারকাজ পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি ‘দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ’ প্রকল্পের অগ্রগতি দেখতে দোহাজারী এলাকায় যান।
জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতু সংস্কার কাজ পরিদর্শন শেষে রেলমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, এটা অনেক পুরনো ব্রিজ। ট্রেন চলে। আবার বিভিন্ন যানবাহনও চলে। আমরা এখানে আলাদা একটি লেইন করে দিচ্ছি। আগে মূল ব্রিজের সংস্কার কাজ শেষ হবে। এরপর ওয়াক ওয়ে’র কাজ শুরু হবে। সেটা চালু হতে আরও ২-৩ মাস লাগতে পারে। তবে তার আগেই মূল ব্রিজটা ট্রেন চলাচলের উপযোগী হবে। এছাড়া এখানে নতুন একটি ব্রিজ হবে। এটা এখানকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। ডুয়েল গেজ রেললাইন এবং ফোর লেইনের সড়ক সহ সেতু হবে। আগামী বছর কাজ শুরু হতে পারে।’ চলতি মাসের ২৯ তারিখের মধ্যে চট্টগ্রাম কালুরঘাট সেতু মেরামতের কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন রেলমন্ত্রী।
দোহাজারীতে পরিদর্শন শেষে রেলমন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্পটির কাজের সর্বশেষ অগ্রগতি দেখার জন্য এসেছি। আশা করছি ৩০ তারিখের মধ্যে অবশিষ্ট কাজ শেষ হয়ে যাবে। দুয়েকটা স্টেশনের কাজ হয়ত বাকি থাকবে। তবে রেল চলাচলের জন্য উপযোগী হবে। ভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যাত্রীবাহী ট্রেন কতটি চলবে, মালবাহী ট্রেন এবং ভাড়ার বিষয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর নির্ধারণ করা হবে। তবে আমরা উন্নত যাত্রীবাহী কোচ দেয়ার বিষয়টি যাচাই বাছাই করছি।
রেলপথের সুফল প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ বিমানে – সড়ক পথে কক্সবাজার যায়। মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা ট্রেনে করে কক্সবাজার যাবে। সারা দেশের মানুষের এই রেলপথ নিয়ে আগ্রহ, ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা সবসময় সাশ্রয়ী নিরাপদ ও আরামদায়ক। এর জন্য এই প্রকল্প। যাত্রীরা আশা করি উপভোগ করবে। এই রেলপথটি ধরে মাতার বাড়িতে যে ডিপ সি পোর্ট করছি, তার সাথেও ভবিষ্যতে যুক্ত করব। কাজেই বহুবিধ ব্যবহারের জন্য এটা করা হচ্ছে।’ পরিদর্শন শেষে রেলমন্ত্রী মোটর ট্রলিতে করে দোহাজারী থেকে নতুন নির্মিত রেলপথ ধরে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হন।
প্রসঙ্গত , আগে কক্সবাজারের সাথে দেশের বাকি অংশের রেল যোগাযোগ ছিল না। শুরুতে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণের যে প্রকল্প নেওয়া হয়, তাতে মোট ১২৯ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণের কথা ছিল। পরে রামু থেকে ঘুমধুম অংশের কাজ স্থগিত করা হয়। এখন চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত মিটার গেজ রেলপথ নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। এই প্রকল্পে দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত রেলপথ ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আরও ১২ কিলোমিটার। এতে ব্যয় হবে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা দিচ্ছে এবং বাকি ৪ হাজার ১১৯ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের জন্য দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার অংশে কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ৩৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে নয়টি রেলওয়ে স্টেশন, চারটি বড় ও ৪৭টি ছোট সেতু, ১৪৯টি বক্স কালভার্ট এবং ৫২টি রাউন্ড কালভার্ট।