Breakingচট্টগ্রাম অঞ্চলসারাদেশ

চট্টগ্রামের পরিবেশবাদী সংগঠন সমুহের বিপ্লব উদ্যানটি রক্ষার দাবি

চট্টগ্রাম:
নগরীর ষোলশহরে অবস্থিত প্রায় দুই একর জায়গায় গড়ে ওঠা বিপ্লব উদ্যানটি রক্ষা করা দায়িত্ব যাদের তারাই এই সবুজ উন্মুক্ত উদ্যানটি শেষ করতে উঠে পড়ে লেগেছে। চট্টগ্রামের পরিবেশবাদী সংগঠন, সচেন নাগরিক সমাজ,পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম সহ কারো আপত্তি-আন্দোলন- অনুরোধ সহ কোন কথাই পাত্তা দিচ্ছেনা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।

 

এই বিপ্লব উদ্যানে কোন রকমের বানিজ্যিক স্থাপনা নির্মান না করার জন্য সিটি কর্পোরেশন সহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মোট ১১ প্রতিষ্ঠানকে এ ব্যাপারে আইনী নোটিশও দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি ( বেলা)কিন্তু পরিস্থিতি যে দিমিওে সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। চট্টগ্রাম নগরীকে পরিবেশ সম্মত ও পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সংগঠন পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম ও বিপ্লব উদ্যানে স্থাপনা বন্ধের দাবিতে অতি সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে।

 

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সম্পাদক স্থপতি জেরিনা হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ১৯৬১ মহা পরিকল্পনায় নগরে পার্ক, খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত পরিসরের অভাব নিয়ে বিশেষ শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। উপরোক্ত পরিসর কোনো নগরের জন্য বিলাসিতা নয়, বরং নগর জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য। নগর জীবনে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য উপযুক্ত আলো-হাওয়া সমৃদ্ধ সবুজ মুক্তাঙ্গন যেমন: উদ্যান, খেলার মাঠ, পাহাড়, জলাশয় ইত্যাদি আবশ্যক। এ কথা কারো অজানা নয়, জলাশয় সহ সকল প্রকার উন্মুক্ত পরিসর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, বায়ু দূষণ ও নগর বন্যারোধে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

ফোরামের দেয়া ওই চিঠিতে আরো বলা হয়, চট্টগ্রাম মহানগরীর জন্য ১৯৬১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রণীত সবগুলো পরিকল্পনা ও মহাপরিকল্পনায় উন্মুক্ত পরিসরের পরিধি বাড়ানো ও এর যথাযথ সংরক্ষণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা এই, নগরীতে উন্নয়নের নামে দিনদিন উন্মুক্ত সবুজ ভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে যার কারণে নগরীর তাপমাত্রা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধিসহ অন্যান্য পরিবেশগত বিপত্তি বাড়ছে। প্রকৃতি বিনষ্টকারী এ সমস্ত কর্মকাণ্ড প্রকৃতপক্ষে টেকসই উন্নয়নের পরিপন্থি। সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক গৃহিত যে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা চট্টগ্রামের মহাপরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া বাঞ্ছনীয়। পরিশেষে, চট্টগ্রাম মহানগরীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশের সুস্থতার স্বার্থে, বিপ্লব উদ্যানে সব রকম অবকাঠামো ভিত্তিক উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে, প্রাকৃতিক সবুজ উদ্যান ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হয়।

 

বুধবার ( ২৪ জানুয়ারী ২০২৪) চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি শাহীনুল ইসলাম বলেন, একটি নগরীকে স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিকল্পিত হিসেকেব গড়ে তুলতে হলে সে নগরীতে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ শতাংশ জায়গা ঘোষিত ও সংরক্ষিতভাবেই উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন। চট্টগ্রাম নগরীতে ১৯৯৫ সালে প্রণীত ও ১৯৯৯ সালে সরকার অনুমোদিত যে মাষ্টারপ্ল্যান রয়েছে তাতেও এ প্রস্তাবনা রয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মত নাগরিকদের সেবা দানকারি একটি প্রতিষ্ঠানই বিপ্লব উদ্যানকে নিয়ে যে কর্মকান্ড শুরু করেছে তা সত্যিই দু:খজনক ও নিন্দনীয়।

 

উল্লেখ্য, বর্তমান মেয়র মো. রেজাউল করিম নির্বাচিত হওয়ার আগে সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্ব পালনকালে খোরশেদ আলম সুজন এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মানকাজ বন্ধ ও উচ্ছেদ করেছিলেন। তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়র থাকাকালেই বিপ্লব উদ্যানে বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মানের কাজ শুরু করেছিলেন। চসিকের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের সময় এই নির্মনকাজ বন্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমান মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর সময় তা আবার বেশ জাঁকিয়ে করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে পার্কে এ ধরনের বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মানে বিরোধীতায় নেমেছেন চট্টগ্রামের পরিবেশবাদী সংগঠন সহ সচেতন নাগরিকগন।

 

প্রসঙ্গত: ১৯৭৯ সালে নাসিরাবাদ ষোলশহর দুই নম্বর রেল গেইটে গাছগাছালিতে ভরা দুই একরের এই উদ্যান গড়ে তোলা হয়। জানা যায়,ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, উদ্যানে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশের বেশি কংক্রিট অবকাঠামো থাকতে পারবে না। আর আন্তর্জাতিক ভাবে ২ শতাংশও অনুমোদন করে না। কিন্তু চট্টগ্রাম নগরের দুই নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানের কংক্রিট অবকাঠামোর পরিমাণ অন্তত: ৫৫ শতাংশ। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ও এক শিক্ষার্থীর করা জরিপে উদ্যানের এই দশা জানা যায়। এখন সেখানে আবার স্থাপনা করা হলে উদ্যানে উন্মুক্ত পরিসর ও সবুজ পরিবেশ বলে কিছুই থাকবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Related Articles

Back to top button