ঘন কুয়াশায় শীতকালীন শস্যের ক্ষতির সম্ভাবনা ; দুঃচিন্তায় কৃষক

চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক, মানিকছড়ি , খাগড়াছড়ি :
খাগড়াছড়ির জেলার কৃষি নির্ভর জনপদের ৯০ শতাংশ মানুষের আয়ের উৎস কৃষি। ফলে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা এখানে কোন কৃষক বেকার না থেকে পতিত জমি সমুহে সারা বচরই কোন না কোন সব্জি উৎপাদন করে থাকে।। বিগত সময়ের চেয়ে এবার সবজি চাষে বাম্পার ফলন হলেও সম্প্রতি সময়ে ঘন কুয়াশায় খেতের ফুল-ফল নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে কৃষক। কৃষিবিদেরা মাঠে কৃষকদের এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে (ঘন কুয়াশা) যথা সম্ভব করণীয় বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। বিগত সময়ের তুলনায় এবার সবজির বাম্পার ফলনের মূল কারণ পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে বিলে বিলে নির্মিত সেচ ড্রেনে সুবিধা! এ বছর উপজেলায় মোট ৬৫২ হেক্টর জমিতে শীতকালীণ সবজি চাষ হয়েছে। যদিও লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৫০ হেক্টর। বিলে বিলে সৃজিত সবজি খেত ফুল-ফলে ভরপুর। বাজারে ৫০ টাকার নিচে সবজি নেই। ফলে প্রান্তিক কৃষক এবার ফল আর বাজারমূল্যে লাভবানের স্বপ্ন দেখছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় রবি শস্য বেগুন, টমেটো, সীম,ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি, শসা, খীরা, চিচিঙ্গা, ঝিঙা, কাকরল, আলু, মরিচ, গাজর, টেঁড়স,লালশাক, পুঁইশাক, স্কোয়াশ ও রেড ক্যাবেজসহ নানা জাতের শীতকালীন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৫০ হেক্টর। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে ৬৫২ হেক্টর! লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধির প্রধানত কারণ জনপদে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে সেচ নালা নির্মাণ।
উপজেলার ১২টি কৃষি ব্লক ঘুরে দেখা গেছে, বিলের পর বিল সবুজ শাকসবজিতে ভরপুর। তিনটহরী ইউনিয়নের চেঙ্গুছড়া ব্লকে দেখা গেছে, হালদা নদীর উপ-শাখা মানিকছড়ি খালের পাশে বিলজুড়ে সীম, টমেটো, চীনাবাদাম, পাতাকপি, মরিচ, আলু, ধনিয়া পাতা, সরিষা চাষ করেছেন কয়েকজন কৃষক। তারা সেচ নালায় পানি সুবিধা পেয়ে বারোমাসি ফসল উৎপাদনে সফল। এ সময় কৃষক মো. ইব্রাহীম আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমাদের এই বিলে প্রায় ২০/২৫ কানি (৪০ শতকে এক কানি) জমিতে ৫/৭ জন কৃষক চাষাবাদ করি। বিগত সময়ে সেচ সুবিধা না থাকায় সবজি ও ধান উৎপাদানে কষ্ট পেতাম! কিন্তু সম্প্রতি সেচ নালা(ড্রেন) নির্মাণ হওয়ায় যখন,তখন অনায়াসে জমিতে পানি আনতে পারছি বলে এ বছর সবজি চাষে আমরা চমক দেখাতে পারছি।
আলু ও টমেটো খেতের ফসলে আমি বেশ লাভবান হয়েছি। ৫০ কেজিতে পাইকারিতে আলু ও টমেটো বিক্রি করেছি। এ সময় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. তামিম আজিজ বলেন, এখানকার প্রান্তিক কৃষক চাষাবাদে মনোযোগী হওয়ায় আমরা (কৃষি বিভাগ) তাদের সব সময় পরামর্শ দিলে তারা আন্তরিক হয়ে তা কাজে লাগায় । কোন জমি অনাবাদি থাকে না।
বড়বিল এলাকায় আইডিএফের সহযোগিতা ও পরামর্শে উপজেলায় প্রথমবার ১০ শতক জমিতে স্কোয়াশ ও রেড ক্যাবেজ চাষ করেন স্থানীয় সংবাদকর্মী চিংওয়ামং মারমা মিন্টু। তিনি জানান, এখানে মাটি ও আবহাওয়া সবজি চাষ উপযোগী হওয়ায় বারোমাস খেতে মৌসুমী শাক-সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। আমি আইডিএফের সহযোগিতায় নতুন সবজি জাতের স্কোয়াশ ও রেড ক্যাবেজ লাগিয়ছি।খেত বা গাছে ফলন ভালো হয়েছে। স্কোয়াশের কেজি ৬০-৭০ টাকা। তবে ঘন কুয়াশায় সবজি খেতে ফল,ফুল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে! এভাবে কুয়াশা লাগাদার হলে কৃষকের চরম ক্ষতি হবে।
উপজেলার শতবর্ষী রাজ বাজারের পাইকারী সবজি বিক্রেতা মো. ইব্রাহীম বলেন, এই জনপদ সবজি উৎপাদনে সেরা। আমরা এলাকার চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন ৫/৬ ট্রাক সবজি সমতলে সরবরাহ করে থাকি। সমতল থেকে সবজি এলাকায় আনা প্রয়োজন তেমন হয় না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান বলেন, আসলে খাগড়াছড়ি জেলার মধ্যে মানিকছড়ি উপজেলায় সবজি চাষ সবচেয়ে বেশি। এখানকার প্রান্তিক কৃষকেরাও চাষাবাদে আন্তরিক। মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদেরা ( উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা) নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শসহ আগ্রহী কৃষকদের প্রণোদনায় সুযোগ দেওয়াসহ চাষাবাদ আরও সম্প্রসারণে কাজ চলছে। সম্প্রতি সময়ে ঘন কুয়াশায় বোরো ও শীতকালীন সব ফসলে কম-বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপরও ক্ষতি কমিয়ে আনতে এই কুয়াশার মাঝেও আমরা মাঠ তদারকি করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি।