ইএনও অফিসের দায়ের করা সাইবার মামলায় অব্যাহতি পেলেন সাংবাদিক
চট্টগ্রাম :
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড় উপজেলা প্রশাসনের দায়ের করা সাইবার নিরাপত্তা আইনের মামলা থেকে স্থানীয় সাংবাদিক মোঃ সাইফুল ইসলামকে অব্যাহতি দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিজ্ঞ সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত। তিনি সাউথইস্ট এশিয়া জার্নাল নামে একটি ম্যাগাজিন পত্রিকার ঢাকা অফিসে কর্মরত আছেন।
এর আগে খাগড়াছড়ির রামগড়ে ‘হাইকোর্টে রীট করে ইউএনওর রোষানলে দুই দিনমজুর’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের জেরে উক্ত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩১ (১) ধারায় মামলা হয়। উক্ত মামলায় হাইকোর্টে আগাম ও খাগড়াছড়ি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত থেকে যথাক্রমে অস্থায়ী ও স্থায়ী জামিন লাভের পর তিনি মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইট ফাউন্ডেশন বিএইচআরএফ এর আইনী সহায়তায় গত ২৫ সেপ্টম্বর চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক জহিরুল কবিরের আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ পূর্বক সেখান থেকেও জামিন লাভ করেন।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোঃ জহুরুল কবির এর আদালত সাইফুল ইসলামকে উক্ত মামলা হতে অব্যাহতি প্রদান করেন।
আসামী পক্ষের আইনবিদ ও বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব এডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান, এড. সাইফুদ্দিন খালেদ, এডভোকেট হাসান আলী, এড.বদরাল হাসান, এড. জিয়াউদ্দিন আরমান, এড. শান্তনু চৌধুরী প্রমূখ মানবাধিকার আইনবিদগণ বিবাদীপক্ষে শুনানিতে অংশ গ্রহণ করেন।
চার্জ শুনানীকালে আসামীর আইনজীবি বলেন, বিতর্কিত মোবাইল কোর্ট এর আদেশ নিয়ে মহামান্য উচ্চ আদালতে দায়ের করা রিট মামলার বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের নিজ ওয়ালে শেয়ার করে তিনি কোন অপরাধ করেন নি। বরঞ্চ তিনি তার পেশাগগত দায়িত্ব ও সাংবিধানিক অধিকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে সমুন্নত করেছেন। এটি মানহানির পর্যায়ে পরে না। এসময় সংবাদদাতা পক্ষে নিযুক্তিয় এডভোকেটগন আসাসীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আবেদন জানায়। আদালত উভয় পক্ষের শুনানী শেষে মামমলার দায় থেকে অব্যাহতি দেন।
গত বছরের ৬ মার্চ তাকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দেন মাননীয় হাইকোর্ট। এরপর ১৭ এপ্রিল তিনি খাগড়াছড়ির বিজ্ঞ চীফ জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত থেকে অস্থায়ী ও ১৩ জুলাই স্থায়ী জামিন পান তিনি।
চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউর এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী অব্যাহতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাংবাদিক মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, সুনির্দিষ্ট তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে জনস্বার্থে আমি একটি সংবাদ প্রকাশ ও তা বহুল প্রচারের লক্ষে আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে হয়রাণির জন্যই এ মামলাটি দায়ের করান রামগড়ের সাবেক ইউএনও। মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশন ও চীফ জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত আমাকে পূর্বে জামিন দিয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব এডভোকেট জিয়া হাবিব আহসানসহ বিএইচআরএফ এডভোকেট প্যানেলের সহায়তায় সারেন্ডার পূর্বক পুনরায় সাইবার ট্রাইব্যুনাল হতে জামিন লাভ করি। আলহামদুলিল্লাহ আজ সেখান থেকে মিথ্যা মামলায় অব্যাহতি পেয়েছি।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১৯ নভেম্বর রামগড় থানায় সাংবাদিক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩১ (১) ধারায় মামলাটি দায়ের করেন রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জালাল আহমেদ। এর আগে ‘ইউএনওর রোষানলে দুই মজুর নিরাপত্তাহীনতায়’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিক সাইফুলের বিরুদ্ধে রামগড় থানায় একটি জিডি করেন ইউএনও অফিসের উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বরাতে জানা গেছে, গতবছরের ১ আগস্ট রামগড় উপজেলা অফিস সংলগ্ন বিজিবি ক্যাম্পে কাজ করার সময় আবুল কালাম ও রুহুল আমিন নামে দুই দিনমজুরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৫ দিনের সাজা দেন রামগড়ের ইউএনও খোন্দকার ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত। পরে বিজিবির সঙ্গে ভূমি বিরোধের জেরে সংক্ষুব্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এ সাজা দিয়েছেন এমন অভিযোগে এনে ২৫ অক্টোবর ইউএনওর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বাতিল ও ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করে দুই দিনমজুর। এ ঘটনায় রিট তুলে নিতে দুই দিনমজুরকে রাজনৈতিক ক্যাডার দিয়ে তুলে নিয়ে সাদা কাগজে সই নেয়া ও হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠে ইউএনওর বিরুদ্ধে। পরে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংবাদ প্রকাশ করেন সাইফুল ইসলাম। এ ঘটনায় ক্ষুব্দ হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার ইউএনও খোন্দকার ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত।
এদিকে, দুই দিন মজুরের করা রিটে ইউএনও’র ৬ মাসের বিচারিক ক্ষমতা বাতিল ও রিটকারীদের ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ কেন দেয়া হবে না মর্মে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে ইউএনও খোন্দকার ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত চেম্বার আদালত ও আপিল বিভাগে আপিল করলেও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ। বর্তমানে রুলটি হাইকোর্ট বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।