Breakingজাতীয়পর্যটনপার্বত্য অঞ্চলরাঙ্গামাটিশিক্ষা / চিকিৎসাশীর্ষ সংবাদসারাদেশ

রাঙ্গামাটি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ

চেঙ্গী দর্পন, স্টাফ রিপোর্টার, রাঙ্গামাটি : রেড জোনে থাকা রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় কয়েক দিনের ব্যবধানে হঠাৎ লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। যা আশঙ্কাজনক বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

গত ৫ দিনে রাঙ্গামাটি জেলা করোনা আক্রান্ত হয়েছে ২২৯ জন। এর মধ্যে ২০ জানুয়ারী ৭১ জন, ১৯ জানুয়ারী ৫৫ জন, ১৮ জানুয়ারী ৪২ জন, ১৭ জানুয়ারী ৩৫ জন, ১৬ জানুয়ারী ১৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে সারা বাংলাদেশের মধ্যে রাঙ্গামাটি জেলায় সংক্রমণ উর্ধ্বমুখি। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রাঙ্গামাটি শহরের করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়ীতে টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে লাল পতাকা। স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিত করতে চালানো হচ্ছে মোবাইল কোর্ট।

১০ শতাংশের উপরে থাকায় এ জেলাকে করোনা সংক্রমণের রেড জোন ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু এরপরও স্বাস্থ্য বিধি নিয়ে অসচেতন রাঙ্গামাটির বেশির ভাগ মানুষ। রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাঙ্গামাটি শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমান অভিযান পরিচালনা করা হলেও রাঙ্গামাটির সাধারণ মানুষের মাঝে অসচেতনতা লক্ষ্য করা গেছে। রাঙ্গামাটির পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে । গতকাল শুক্রবার রাঙ্গামাটি কাপ্তাই হ্রদে অসংখ্য পর্যটককে ঘুরতে দেখা গেছে। তবে তাদের অবাধে ঘোরা ফোরায় স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষিত হচ্ছে।

২০ জানুয়ারী রাঙ্গামাটি পিসিআর ল্যাব ও এন্টেজিনায় ১৮২জন নমুনা পরীক্ষা করেছেন এর মধ্যে ৭১ জনের পজেটিভ এসেছে। নমুনা পরীক্ষা অনুসারে সনাক্তের হার ৩৯.০১% পার্সেন্ট। রাঙ্গামাটি পিসিআর ল্যাবে ১০০ জন এবং এন্টেজিনায় পরীক্ষা করেছেন ৮২ জন। মোট ১৮২ জনের মধ্যে রাঙ্গামাটি সদরে ৪৯ জন, কাপ্তাই উপজেলায় ১৩জন, বাঘাইছড়ি ২ জন, কাউখালী ২ জন, রাজস্থলীতে ১ জন, লংগদুতে ১ জন ও নানিয়ার চরে ১ জনের করোনা পজেটিভ আসে।

রাঙ্গামাটিতে এ পর্যন্ত ২৭,৬৯১ জন নমুনা পরীক্ষা করেছেন এর মধ্যে নেগেটিভ এসেছে ২৩,১৭১জনের। এর মধ্যে পজেটিভ এসেছে ৪,৫২০জন। মোট মৃত্যুবরণ করেছে ৩৪জন। রাঙ্গমাটিতে প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ৪,০০,৯৯ জন, ২য় ডোজের টিকা নিয়েছেন ৩,০১,৬৪৬ জন।

রাঙ্গামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ম্যানেজার সৃজন কুমার বড়ুয়া জানান, গতকাল কয়েকটি বাস এসেছে রাঙ্গামাটি পর্যটন কেন্দ্রে। তারা সকলে এসে বিকালে চলে গেছে। তাদেরকে আমরা মাস্ক ছাড়া পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে প্রবেশ করতে দেইনি। তবে রাঙ্গামাটির পর্যটন মোটেলে কোন বুকিং নেই। এই ভাবে চলতে থাকলে আবারে রাঙ্গামাটির পর্যটন শিল্পে ধ্বস নেমে আসবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

রাঙ্গামাটির পর্যটন কেন্দ্র গুলো বন্ধ না হওয়ায় রাঙ্গামাটি জেলায় করোনার সংক্রামন রোধ করা যাচ্ছে না বলে ধারণা করছেন রাঙ্গামাটির সচেতন মহল। রাঙ্গামাটির বাইরে থেকে আসা পর্যটক গুলোর মুখে মাস্কের বালাই পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। শহরে প্রবেশ করা পর্যটক গুলো যাচ্ছে তাই ভাবে শহরে ঘোরা ফেরা করছে। শহরের হোটেল গুলোতে অর্ধেক আসন থাকার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। তাই এই মুহুর্তে করোনার লাগাম টেনে ধরতে আরো বেশী ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করার আহবান জানিয়েছেন সচেতন মহল।

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, হঠাৎ করে রাঙ্গামাটি শহরে করোনার সংক্রামন বেড়ে যাওয়ায় রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তার কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। রাঙ্গামাটি শহরের বিভিন্ন স্তরের ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। রাঙ্গামাটি শহরের পর্যটন কেন্দ্র গুলোতেও নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। মাস্ক ছাড়া কাউকে পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এছাড়া পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে সচেতনতা বাড়াতে পুলিশের পাশাপাশি স্বেচ্ছা সেবক টিমকেও রাখা হয়েছে । ধারণ ক্ষমতার অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে।

বর্তমানে রাঙামাটিতে করোনা সংক্রমণের বৃদ্ধিতে আশঙ্কাজনক বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা বলেন, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা না হলে ভবিষ্যতে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। যা সামাল দেওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়বে। বর্তমানে জেলা সদরের পাশাপাশি উপজেলাগুলোতেও সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে মাস্ক ব্যবহার সহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চলতে হবে।

Related Articles

Back to top button