Breakingসারাদেশ

জন্মস্থান ইরতা গ্রামে কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে চান ইংল্যান্ডের রামস গেটের মেয়র

চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) : নিজ জন্মভূমি মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় শিক্ষার মানোন্নয়নে কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে চান ইংল্যান্ডের রামসগেটের মেয়র রওশন আরা দোলন। সম্প্রতি দ্বিতীয় বারের মতো রামসগেটের মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি এ ইচ্ছার কথা জানান।

রওশন আরা দোলন গত বছর নভেম্বরে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের ১৯ হাজার কাউন্সিলরের মধ্যে সেরা কাউন্সিলর হিসাবে পুরস্কৃত হন। এ বছর মহামারির কোভিড-১৯ এর কারণে যুক্তরাজ্যের সকল নির্বাচন এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। গত ২৯ জুলাই রামসগেট টাউন কাউন্সিলের এক সভায় সরকারি দল কনজারভেটিভ ও লেবার দলের সর্বসম্মতিতে তিনি মেয়র পদে পুনঃদায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করবেন।

রওশন আরা দোলন বলেন, আসলে মানুষের জন্য কাজ করলে মানুষ অবশ্যই তার মূল্যায়ন করেন। রামসগেটে বাঙালি নেই বললেই চলে। এখানে বিজয়ী হতে আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। মানুষের জন্য ভালো কিছু করা আমার নেশা। এই কর্মস্পৃহাই আমাকে রাজনীতিতে এনেছে। আমি সব সময় মানুষের জন্য ভালো কাজ করে যেতে চাই। আমি একজন মুসলিম হিসেবে গর্বিত। বিশ্বের নানা দেশে মুসলিম জাতি আজ নিগৃহীত-নির্যাতিত। আমি একজন মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্য হিসাবেই কাজ করছি। আমি তাদের প্রতিনিধি হিসাবেই কাজ করে যাব। আমার বার্তা হচ্ছে- একজন মুসলমান সততা-নিষ্ঠা এবং উদার নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সমাজের প্রতিটা মানুষের সেবা করতে সক্ষম। ইতিমধ্যেই আমি তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। মুসলমান কখনোই ঘাতক নয়। তারা সকল মানুষ-মানবতার দায়িত্বশীল সেবক।

রওশন আরা দোলন উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন রয়েল চার্টার খ্যাত ইউনিভার্সিটি অব কেন্ট থেকে। পরে যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল লেবার পার্টির সঙ্গে যুক্ত হয়ে নানা সমাজ সেবামূলক কাজ শুরু করেন। এরপর তিনি ২০১৯ সালে লেবার পার্টি থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন লাভ করেন। এই নির্বাচনে তিনি প্রথমবারের মতো এশীয় বংশোদ্ভূত কোনো মুসলিম নারী ৫৬ জন কাউন্সিলরের মধ্যে সর্বাধিক ভোট পেয়ে বিজয় লাভ করেন। রামসগেটের জনসংখ্যা প্রায় ৪২ হাজার। এরমধ্যে ৩৮ হাজার ৭১০ জন অর্থাৎ প্রায় ৯৭ শতাংশ ইংলিশ শ্বেতাঙ্গ কমিউনিটির মানুষ যেখানে এশিয়ান মাত্র ৭৫৬ জন।

স্থানীয় বাসিন্দা টম জে লন্ডন প্রতিনিধি অহিদুজ্জামানকে বলেন, রওশন আরা তার শালীন-শোভন আচরণের মাধ্যমে আমাদের মনের গভীরে জায়গা করে নিয়েছেন। আমরা দলমত নির্বিশেষে তাকে ভোট দিয়েছি। অপর এক বাসিন্দা রেবেকা স্কট বলেন, আমি যখনই কোনো কাজে তার কাছে গিয়েছি তখনই তাকে একজন ভালো বন্ধু হিসাবে পেয়েছি। বাংলাদেশি অভিবাসী বেলাল আহমেদ বলেন, রওশন আরা এই এলাকায় দারুণ জনপ্রিয়। তিনি সত্যিই বাংলাদেশের এবং যুক্তরাজ্যে বাঙালি কমিউনিটির গর্ব।

রওশন আরা দোলন সিংগাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেন। তালেবপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে চলে যান। তার স্বামী পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার রেজাউর রহমান জামান একজন ব্যবসায়ী। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে রওশন আরা দোলন সবার বড়। ইংলিশ সমুদ্র উপকূলীয় নগরী রামসগেট কাউন্সিলের মেয়র রওশন আরা দোলনের বাবা প্রকৌশলী রজ্জব আলী খান উচ্চ শিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে যান ১৯৬৩ সালে। তিনি বাবা-মার সঙ্গে ১৯৭৭ সাল থেকে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

রওশন আরা দোলন আরও বলেন, আমি আমার জন্মস্থানকে কখনোই ভুলে যাইনি। তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা কাশেমপুর কাঁঠাল বাগান গ্রামে প্রায় প্রতি বছর বেড়াতে যাই। চেষ্টা করি এখানের পিছিয়ে থাকা নারীদের সহায়তা করতে। এ জন্য ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেছি রামস-বাংলা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি দাতব্য সংস্থা। এখন আমি সিংগাইরের শিক্ষার মানোন্নয়নেও কাজ করতে চাই।

Related Articles

Back to top button