Breakingপার্বত্য অঞ্চলবান্দরবানশিক্ষা / চিকিৎসাসারাদেশ

উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেলে ব্যাংকার হতে চায় সংনং ম্রো

চেঙ্গী দর্পন প্রতিবেদক ,থানচি, বান্দরবান  :
বান্দরবানে থানচি উপজেলার সদর ইউনিয়নের অম্পুং ম্রো পাড়া নিবাসী বিধবা চামসেক ম্রো এর ২ মেয়ে ২ ছেলের সংসারে জুম চাষ অভাব অনটনে সংসার চালান। অভাব যাঁর পরিবারের নিত্য সঙ্গী। গত ২৮ নভেম্বর সোমবার প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে তাঁর ছোট মেয়ে সংনং ম্রো থানচি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় হতে ব্যবসা বানিজ্য বিভাগ হতে জিপিএ- ৫, ০০ অর্জন করে বুঝিয়ে দিলেন অদম্য মনোবল থাকলে সব কিছু জয় করা সম্ভব।

 

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়,থানচি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৮৪ সালে স্থাপিত হয়। ১৯৯৫ সালে সর্বপ্রথম এসএসসি উর্ত্তীন্ন পরীক্ষা অংশ নেন রুমা উপজেলা পরীক্ষা কেন্দ্রে। ২০১০ সালে এসএসসি উর্ত্তীন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে অনুমোদন পায়। ২০১৭ সালে থানচির সাংগু সেতু উদ্ভোধনের সময় প্রধান মন্ত্রীর শেখ হাসিনা বিদ্যালয়টি সরকারী ঘোষনা করেন। স্থাপিত ৩৮ বছরে এস এস সিতে সর্বপ্রথম জিপিএ ৫. ০০ পেয়েছেন একজন শিক্ষার্থী। এর আগেই জিপিএ ৫.০০ কেউ পায়নি। ২০২২ সালে মোট ৫৪ জন শিক্ষার্থী এসএসসি উর্ত্তীন্ন পরীক্ষা অংশ নেন এর মধ্যে জিপিএ এ ৩ জন, এ- ৭ জন,বি ১৮ জন, সি ১২ জন ১৩ জন অকৃতকার্য হয়েছে। অকৃতকার্যরা অধিকাংশ অংকের কিছু শিক্ষার্থী ইংরেজিতে ফেল করেছে বলে সংশ্লিষ্ঠরা জানান।

 

বুধবার (৩০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টায় থানচি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে স্বাক্ষাতে সংনং ম্রো জানান, রাউজানে অগ্রসার বৌদ্ধ অনাথালয়ে ২০১৭ সালে ৬ষ্ট শ্রেনিতে ভর্তি করেন। একই সালে আমার বাবা কিংদম ম্রো একটি কঠিন রোগে চিকিৎসা অভাবে মারা যান এর পর বিধবা মা অনেক কষ্ট করে আমাদের দুই বোনকে পড়িয়েছেন, ঘরে সবসময় অভাব অনটন লেগে থাকতো এরপরেও মা আমাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। মা আমাকে ২০১৮ সালে থানচি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেনিতে ভর্তি করেন। কোন রকমে ৮ম শ্রেনিতে জিপিএ ৩.৮৬ পেয়ে পাশ করেছি। বাবা মারা যাওযা আাগে ছোট বোন বান্দরবানের সুয়ালক ম্রো আবাসিকে ফ্রিতে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে বর্তমানে ৮ম শ্রেনিতে অধ্যায়নরত।

 

সংনং ম্রো জানান, ৮ম শ্রেনির শেষ করে ৯ম ও দশম শ্রেনিতে পড়তে প্রচুর টাকা প্রয়োজন হলে মা আমাকে পড়াইতে পারবেনা বলে জানাই। বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী উম্যায়ী মারমা আমাকে বলেন তাঁর বাড়ীতে থেকে আমি যতদুর পড়তে চাই ততদুর পর্যন্ত লেখা পড়া সহ খাওয়া খরচ চালানো কথা বলে আমি রাজি হয়ে আজ এসএসসিতে জিপিএ ৫.০০ অর্জন করতে পেরেছি। সে সাথে বিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষকরা আমার পাশে ছিলেন। আমাকে পড়াশোনার ব্যাপারে নানা ভাবে সহযোগিতা করেছে। আমাকে লেখা পড়া করার সুযোগ পেলে উচ্চ শিক্ষা শিক্ষিত হয়ে একজন ব্যাংকার হিসেবে খ্যাতি পেতে চাই।

বিধবা চামসেক ম্রো জানান, আমার দুই ছেলে দুই মেয়ে এক ছেলে ৫ম শ্রেনির পর্যন্ত পড়ে আর পড়েনা আমার সাথে জুমে কাজ করে। বড় ছেলে বিবাহিত আলাদা সংসার তার।সব চেয়ে ছোট মেয়েকে ম্রো আবাসিকে বিনা খরচে পড়ানো সুযোগ পেয়েছে। স্বামী মারা যাওয়ার পর অভাবের সংসারে তাঁর অনেক শখ পুরণ করতে পারিনি। আজকের তাঁর এই ফলাফলে আমরা খুশি। সব অবদান বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী উম্যায়ী ম্যাডাম।

 

বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী উম্যায়ী মারমা জানান,আমাদের বাড়ী থানচি উপজেলা দুর্গম বড় মধকের মায়ানমার সীমান্তে ঘেঁষা আমার বাবা মা আমাদের ৫ ভাই বোনকে কস্ট করে বান্দরবান শহরে রেখে লেখাপড়া খরচ চালিয়েছে। বাবা মায়ের কস্টটা বুঝি বলে আজ আমরা চাকুরী করি আমাদের আয় থেকে সম্ভবনুসারে সঞ্চয় না করে মানবতার কাজের ব্যয় করি এ মনোভাব রেখে সংনং ম্রো আমার ছোট বোন হিসেবে যতটুকু পড়তে চায় ততটুকু চেস্টা করে যাবো।

 

থানচি সরকারী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ জানান, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার থেকে অনেক শ্রম দিয়েছি কিন্তু গত ৩৮ বছরে সাধনা আজকের আমরা খুবই আনন্দিত। সেই বিদ্যালয়ের গত ৪ বছরে সবসময় প্রথম হতো শান্ত শিষ্ট এবং একজন মনোযোগী ছাত্রী হিসাবে সেই আমাদের সকলের প্রিয় ছিল। পিছিয়ে পড়া একটা এলাকা হতে জিপিও – ৫. ০০ অর্জন করা মোটেই সহজ ছিল না অনেক ত্যাগ ও রাতের ঘুম হাড়াম করতে হতো। আমরা শিক্ষকরা সব সময় তাঁর পাশে ছিলাম ভবিষ্যৎতে ও থাকবো। তাঁর ভবিষ্যৎ জীবনের সফলতা কামনা করছি।

Related Articles

Back to top button